মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসহাক সিকদারসহ পাঁচজনের ফাঁসি

ধর্ষণ ছিল বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী, পর্যবেক্ষণে আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসহাক সিকদারসহ পাঁচজনের ফাঁসি

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর পাঁচ রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। এ মামলার পাঁচ আসামি হলেন ইসহাক সিকদার, আবদুল গনি হাওলাদার, আবদুল আওয়াল ওরফে মৌলভী আওয়াল, আবদুস সাত্তার প্যাদা ও সুলাইমান মৃধা। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও আবদুস সালাম খান। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আসামিরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, বিষয়টি তাজা বুলেটের চেয়েও ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী। যারা এর শিকার হয়েছেন, তাদের সারা জীবন এ ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা বহন করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক। তাদের ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে। রায়ের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ১১ জনকে হত্যা এবং ১১ জনকে জখম করে। আসামিদের বিরুদ্ধে এসব অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত পাঁচ আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। প্রসিকিউশন এ রায়ে সন্তুষ্ট আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। তারা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলে তারা খালাস পাবেন।’ ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর এ মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির পর পাঁচজনকেই গ্রেফতার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ জনকে হত্যা ও ১৫ নারীকে ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট দুটি অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। ৩০ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

রায় দ্রুত কার্যকর দাবি : পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইটবাড়িয়া এলাকার ইসহাক সিকদারসহ পাঁচজনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ার খবর পেয়ে খুশি মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে দেওয়া রায় অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে একাত্তরে ইটবাড়িয়া এলাকার নির্যাতিতা বিরাঙ্গনা ও তাদের স্বজনরা। এছাড়া আসামিদের ফাঁসির রায়ের খবর পেয়ে তাত্ক্ষণিক পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। রায়ের খবর পেয়ে ইটবাড়িয়া এলাকার মানবতাবিরোধী অপরাধী কর্তৃক নির্যাতিতা বিরাঙ্গনা রিজিয়া পারভিন ও মনোয়ারা বেগম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ট্রাইবুন্যালের দেওয়া রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। তবে সরকারের কাছে আমাদের দাবি ফাঁসির রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। দেরিতে হলেও অপরাধীদের বিচার হওয়ায় আনন্দিত তাদের পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা।

সর্বশেষ খবর