আজ পবিত্র হজ। সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফ থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাত ময়দানে সারা দিন অবস্থান লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারীর। বিশ্বের ১৭১টি দেশের ২৫-৩০ লাখ মুসলমান হজ পালনের জন্য কেউ হেঁটে, আবার কেউবা গাড়িতে চড়ে হাজির হবেন আরাফাতের ময়দানে। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজ। পুরুষের দেহ মোড়ানো এহরামের শ্বেত শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়। আশরাফ-আতরাফ সবারই দীন বেশ। তাদের ভীতু-কম্পিত হৃদয়মথিত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে তালবিয়া। লাব্বাইক! আল্লাহুম্মা লাব্বাইক!! লা শারিকা লাকা লাব্বাইক!! ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক (আমি হাজির! ও আল্লাহ! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সমস্ত প্রশংসা এবং নিয়ামত শুধু তোমারই, বিশ্ব-সমগ্র সাম্রাজ্যও শুধুই তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই)। এ অমিয় ধ্বনি মিনা উপত্যকায় রচনা করবে স্বর্গীয় আবহ। আজ ফজরের নামাজের পর হজব্রত পালনকারী লাখ লাখ নর-নারী ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন। অবস্থান করবেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল ভূমি মুসলমানদের অতি পবিত্র। এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন। হজের খুতবা শুনবেন এবং একই সঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা পাঠ করবেন গ্র্যান্ড ইমাম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহতায়ালার জিকির-আসকার ইবাদতে মশগুল থাকবেন। অতঃপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়বেন এবং সারা রাত সেখানে অবস্থান করবেন। প্রত্যেকে মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। আগামীকাল ১০ জিলহজ মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন হাজীরা। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মীনাকে ডান দিকে রেখে হাজীরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) কংকর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করবেন। চতুর্থ কাজ হাজীদের তাওয়াফে জিয়ারত। ১০ জিলহজ মিনায় রাতযাপন করে পরদিন মঙ্গলবার ১১ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজীরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত। ১১ জিলহজ মিনায় রাতযাপন করে পরদিন বুধবার ১২ জিলহজ পুনরায় একইভাবে হাজীরা তিনটি শয়তানের ওপর প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপ করা শেষ করে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজীদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ী তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজীরা পবিত্র হজব্রত পালন সম্পন্ন করবেন।