শিরোনাম
সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকারে নসরুল হামিদ বিপু

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য চাই সরকারের ধারাবাহিকতা

নিজামুল হক বিপুল

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য চাই সরকারের ধারাবাহিকতা

নসরুল হামিদ বিপু। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর তিনি দায়িত্ব পান এই মন্ত্রণালয়ের। এর পর থেকেই আছেন তিনি এই দায়িত্বে। তার মেয়াদে গত প্রায় পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তার মন্ত্রণালয় এবং সরকারের নানা সফলতা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা, আগামী তিন বছরে বিদ্যুৎ খাতে কেমন পরিবর্তন আসবে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে বিদ্যুতের বড় হাব তৈরিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এসব ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সবার আগে প্রয়োজন একটি ধারবাহিক সরকার, যে সরকার দেশের জন্য উন্নয়ন করবে। বলেছেন, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নৌকা এবং শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই। গতকাল সচিবালয়ে নিজের দফতরে বসে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রশ্ন : আপনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় পাঁচ বছর। এই সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের অগ্রগতি এবং আপনার আসার আগের সময়টার চিত্র যদি একটু তুলে ধরতেন।

নসরুল হামিদ বিপু : দেশে বিদ্যুতের একটা ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল একটা পরিকল্পনা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১০ সালে একটা মাস্টারপ্ল্যান করেছি। দেখলাম ইমিডিয়েট ক্রাইসিস ছিল। আমরা শর্ট টার্মে কিছু লিকুইড ফুয়েল নিয়ে আসছিলাম। তারপর মিড টার্মে আমরা কিছু গ্যাস বেইজড বা ডুয়েল ফুয়েল বেইজড পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে আসি। তারপর লং টার্মে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বিশেষ করে মূল্যের দিকে খেয়াল করে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা কিছু লং টার্ম প্ল্যান করেছি, যেটাতে আমরা কৌন, এলএনজির বড় পাওয়ার প্লান্ট এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করেছি। আরেকটা বিষয় আমরা চিন্তা করেছি যে রিজিওনাল পাওয়ার কীভাবে কানেক্ট করা যায়। যেমন পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে কীভাবে পাওয়ার আনা যায়। ভারত থেকে আমরা শুরু করেছি। ইতিমধ্যে আমরা ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এনেছি। ভবিষ্যতে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধন করবেন। নেপালে আমরা ইতিমধ্যে একটা সমঝোতা চুক্তি করেছি। ভবিষ্যতে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ব্যাপারে জানালা খোলা হলো। নবায়নযোগ্য জ্বালানির (এনার্জি) ক্ষেত্রে আমাদের যে টার্গেট, সে লক্ষ্যে আমরা বহু আগে কাজ শুরু করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে প্রায় ৫৩ লাখ বাড়িতে ইনডিভিজুয়াল সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা মিনি গ্রিড শুরু করেছি ইটকলের অর্থায়নের মাধ্যমে, প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে। গ্রিড কানেকটিভিটিতে আমরা বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছি। ৫ মেগাওয়াট, ৩০ মেগাওয়াট এ রকম বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বড় আকারের প্রকল্প আমরা তৈরি করছি। আশা করছি ভবিষ্যতে আমরা এসব প্রকল্প থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত করতে পারব।

আরেকটি বিষয় আমরা চাইছি সোলারের মাধ্যমে। যেহেতু এটা খুব এক্সপেনসিভ কনভেনশনাল, যেভাবে আমরা পাওয়া তৈরি করি না কেন, সোলারে বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য এক্সপেনসিভ। আরেকটা বড় বিষয় হচ্ছে জায়গা। আমরা দেখছি, অনেকে হয়তো বলছেন, সোলারে আমরা কেন করি না বা করছি না। তাহলে বিদ্যুৎ আরও সাশ্রয় হতো। তারা হয়তো বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি পরিকল্পনা মাথার মধ্যে নেননি যে বাংলাদেশ খুব ঘনবসতি দেশ। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যদি সোলারে করতে হয় তাহলে নন-এগ্রিকালচার ৪০০ একর জমি লাগবে। সুতরাং আমাদের এগোতে হচ্ছে অনেক হিসাব করে, চিন্তা করে। এখনো আমাদের সোলারে বিদ্যুৎ এক্সপেনসিভ। এই ক্ষেত্রগুলো চিন্তা করে আমরা বলতে পারি, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল শেষ পর্যায়ে বলব না যে আমরা পুরোপুরি সাকসেসফুল। তবে আমরা একটা ভালো জায়গায় পৌঁছেছি। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, তার ভিশনারি সিদ্ধান্ত এবং তিনি আমাদের সময়পোযোগী ভিশন দেওয়ার জন্য।

প্রশ্ন : সারা দেশে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন...

নসরুল হামিদ বিপু : আশা করি, আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি তাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাব। আর আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ২০১৮ সালের মধ্যে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ৯২ শতাংশ ঘরে পৌঁছে গেছি। আশা করছি, অন্তত এই বছরের শেষ নাগাদ আমরা দেশের ৯৫ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শেষ করতে পারব। আমাদের টার্গেট ছিল ডিসেম্বর মাস। এখনো ডিসেম্বর আসতে দুই-তিন মাস বাকি। ১০০ ভাগ কীভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে শুধু বিদ্যুৎ কানেকশন টানলে তো হবে না, মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হলো, এত ঘনবসতি আনপ্লানড আরবান এবং রুরাল এরিয়াতে খাল-বিল-নদী-নালা পেরিয়ে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া। আমাদের জিওগ্রাফিকাল স্ট্রাকচার ভিন্ন। প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ বিদ্যুৎ। গ্রাহকের প্যাটার্ন ভিন্ন। কোনো গ্রাহকের বিল আসে ৫০ টাকারও নিচে, আবার কোন গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকার ওপরে। সুতরাং এই যে ইম্পারেটিভ... বিদ্যুতের লাইন তো একই করতে হয়। গ্রামগঞ্জে ১০ ঘরের জন্য যেমন বিদ্যুতের লাইন করতে হয়, ১০ হাজার ঘরের জন্যও লাইন করতে হয়। তাই সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা আমরা শুরু করেছি। এখন কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখা যায়, আমাদের বিদ্যুৎ জেনারেশনের দিক দিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। গ্রাহকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। আমরা আশা করছি আরও বছর তিনেক সময় লাগবে এই জায়গাতে একটা ভালো অবস্থা তৈরি করতে। তবে আগের চেয়ে এখন অবস্থা অনকে ভালো হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারছি। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় হয়তো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেগুলো বছর কয়েকের মধ্যে আমরা ঠিক করে ফেলব আশা করছি।

প্রশ্ন : বিদ্যুতের মূল্য তো অত্যধিক...

নসরুল হামিদ বিপু : বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে ‘প্রাইস’। মূল্যটাকে সাশ্রয়ী করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে আমাদের আস্তে আস্তে লিকুইড ফুয়েল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা যত দ্রুত বৃহৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে আসব, তত দ্রুত লিকুইড ফুয়েল থেকে বের হলে বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে একটা সাশ্রয় হবে। আমাদের যে ভর্তুকি তা কমে আসবে। আমরা আশা করছি, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মাথায় আমরা ভর্তুকি থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে পারব। এই যে এত বড় এতগুলো প্রকল্প আমরা করেছি, সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় এগুলোয় অর্থের জোগান দেওয়া। আমরা যদি উন্নত বিশ্বের একটা দেশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কথা চিন্তা করি, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো বিশাল অর্থ লাগবে। সেটি বিনিয়োগ থেকে আসতে পারে। তাই মাথায় রাখতে হবে, এই এত এত অর্থ কোথা থেকে আসবে। শুধু আমি বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, আমি এক ঘণ্টা পাচ্ছি না, আধঘণ্টা পাচ্ছি না—উন্নত দেশেও এক সেকেন্ড, পাঁচ সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎ যায়। সেই দেশটা যদি আমরা কল্পনা করি, তাহলে সেই দেশের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ২০ ডলারের ওপরে। তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার হার হলো পাঁচ হাজার কিলোওয়াটের ওপরে। আমাদের কী অবস্থা। আমরা মাত্র ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৬০০-১৭০০ ডলারের মতো। সুতরাং আমাদের বায়িং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। আরেকটা বড় বিষয় হচ্ছে অর্থ কীভাবে আসবে? ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট আসার জন্য আস্থা তৈরি করতে হবে। আমরা প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ বিভিন্ন খাত থেকে পেয়েছি দেশের প্রতি এবং শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আস্থা থাকার কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। দলমতনির্বিশেষ এই সরকারের প্রতি সারা বাংলাদেশের সব মানুষ আস্থা রেখেছিলেন বলেই আজ এত বড় একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামীর বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের দিকে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় উদাহরণ দেওয়া হয় বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দ্রুততার গতি ধরে রাখতে হলে একটি সরকারের ধারবাহিকতা দরকার। এই বিষয়টি যদি আমরা মাথায় রেখে আগামী নির্বাচনে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়লাভ করতে পারি, তাহলে ইনশা আল্লাহ আরও সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ ও আলোকিত বাংলাদেশ দেখতে পারব।

প্রশ্ন : আপনি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলছিলেন। দেশের হাওরাঞ্চলে যেসব বিচ্ছিন্ন গ্রাম ও বাড়িঘর রয়েছে, সেগুলোতে কীভাবে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবেন?

নসরুল হামিদ বিপু : এই যে তীব্র গরম গেল, আমরা এই সময়টায় মাথায় রেখেছিলাম যে আমাদের সিস্টেম যেন কাজ করে। আমাদের অনেক সিস্টেম এখনো অনেক পুরনো, কেব্ল্ লাইন পুরনো, সাবস্টেশন পুরনো। ওভার ক্যাপাসিটি হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ ট্রান্সফরমার পুরনো। এগুলো চেঞ্জ করা। আবার নতুন কানেকশন হচ্ছে। এতে করে লোড বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সব কর্মকর্তা রাত-দিন টিমওয়ার্ক করেছেন। আমরা মিনিস্ট্রি থেকে সার্বক্ষণিক তাদের ওপর নজর রেখেছি। আমি নিজে বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলে গিয়েছি অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য। এই যে দূরের একেকটি গ্রাম, সেখানে বিদ্যুৎ দিয়ে যে বিল হবে, তাতে ১০০ বছরেও বিদ্যুতের খরচ কিন্তু ওঠানো যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার চাইছে দেশের সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে হবে। দরকার পড়লে সেখানে সরকার ইনভেস্ট করবে, যার কারণে কিন্তু সরকার বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। যদি আমরা বিদ্যুৎ না দিই, তাহলে অবস্থা কী হবে—ইকোনমিক্যালি আমরা যে উন্নত দেশের কথা বলছি, সেটা হবে না, হতে পারবে না। কারণ বিদ্যুতের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এইচডিআই লেভেল কিন্তু ডেভেলপ হয়। হিউম্যান ডেভেলপিং ইনডেক্সগুলো সঙ্গে সঙ্গে ডেভেলপ করে। বিশ্বের যেসব দেশ উন্নত হয়েছে, সেসব দেশের এইচডিআই লেভেল আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ হচ্ছে পাওয়ারের সঙ্গে রিলেটেড। তারা যত বেশি পাওয়ার পেয়েছে তত বেশি উন্নত হয়েছে। চাকরির জায়গাটা তৈরি হয়েছে। এমপ্লয়মেন্ট তৈরি হয়েছে। সে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে, তত বেশি আধুনিক হয়েছে, যার কারণে তাদের হেলথ সেক্টর, এডুকেশন সেক্টর উন্নত হয়েছে। এই জায়গায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার নজর দিয়েছেন বিদ্যুতের ওপর।

হাওরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই হাওরে পানির মধ্যে, শুকনো মৌসুমে কংক্রিটের বড় বড় পুল নেওয়া যায়, সেটা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। দুইটা বাড়ির জন্য, চারটা বাড়ির জন্য কীভাবে পুল নেওয়া হবে। তারপর ভোল্টেজের ওঠানামার বিষয়টি, তারা কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে সাশ্রয়ী হবে কি না। আমরা এখানে দুটো বিষয় চিন্তা করেছি। একটা হচ্ছে সোলার, আরেকটা বিদ্যুৎ। এই কারণে আমরা চেষ্টা করেছি হাওরাঞ্চলে বিদ্যুৎ দেওয়ার। হাওরে বিদ্যুৎ দিয়ে দেখি যে সাংঘাতিকভাবে লাইফ চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাদের বিদ্যুতের ব্যবহারের কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ হাওরের মানুষ যেন মাছ সংগ্রহ ও বরফ দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে পারেন সে জন্য আমরা সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ জন্য স্পেশাল প্রজেক্ট আছে।

আরেকটা বড় বিষয় হলো, দ্বীপাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছানো। পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। আমরা আশা করছি পদ্মা সেতু হলে পরে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। ১০ হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে দক্ষিণাঞ্চল হবে বিদ্যুতের একটা বড় হাব। পায়রাকে লক্ষ্য করে আমরা এই হাবটা তৈরি করছি। আগামী ১০ বছরের মাথায় এখানে একটা বড়  জায়গা তৈরি হবে বলে আমরা মনে করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু। রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে, রেললাইন যাচ্ছে। সুতরাং এটি টার্গেট করে আমরা সেখানে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : এখানে আপানাদের ইনভেস্টমেন্ট টার্গেট কত?

নসরুল হামিদ বিপু : একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আমাদের ওয়ান পয়েন্ট টু বিলিয়ন ডলার লাগে। ৬০ হাজার মেগাওয়াট যদি আমরা উৎপাদন করি তাহলে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো লাগবে। এটা কিন্তু শুধু বিদ্যুতের পাওয়ার প্লান্ট তৈরি নয়, ট্রান্সমিশন লাইনসহ। এ ক্ষেত্রে জ্বালানিও ঠিক করতে হবে। তিন হাজার এমএমসি গ্যাসের ঘাটতি হবে আগামী বছর। সেটাি আমাদের পূরণ করতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছি। আমি মনে করি এখন সময় এসেছে পরিকল্পনা ও ইমপ্লিমেন্ট করার। যারা ইন্ডাস্ট্রি করতে চাইছেন, আপনারা আগামী দুই বছরকে টার্গেট করুন। ইনশা আল্লাহ আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আপনাদের দিতে পারব।

প্রশ্ন : আপনি ভূগর্ভস্থ লাইনের কথা বলছিলেন...

নসরুল হামিদ বিপু : নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে যেখানে ঘনবসতি বেশি সেখানে আমাদের ভূগর্ভস্থ লাইন দিতে হবে। ট্রান্সমিশনগুলো মাটির নিচে নিয়ে যেতে হবে, বেজমেন্টে নিয়ে যেতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন মানে কী—ঝড়-বাদল হলেও যাতে লাইন না ছেঁড়ে। বিদ্যুৎ যেন বন্ধ না হয়। সারা বাংলাদেশে এটা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে এটা অসম্ভব ব্যাপার। কোথাও লাইন ছিঁড়ে যাচ্ছে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হচ্ছে। এগুলো পরিবর্তন করে একটা ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। আমি বলছি না যে ১০০ ভাগ নিরবচ্ছিন্ন হবে। ১০০ ভাগ নিরবচ্ছিন্ন হলে তো আমাদের উন্নত দেশ হতে হবে। এ জন্য খরচও তো বেশি। আমরা মনে করছি, আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে এখন। আরও ভালো হবে। আগামী তিন বছরের মাথায় একটা ভালো জায়গায় পৌঁছে যাব।

প্রশ্ন : আপনি আসার পর থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতে প্রাইভেট সেক্টরের মোর ইনভলভমেন্ট আশা করছিলেন...

নসরুল হামিদ বিপু : ইতিমধ্যে আমরা গ্যাস সেক্টরটাকে প্রাইভেট সেক্টরে নিয়ে গেছি। এলএনজি গ্যাস দিচ্ছে। ভবিষ্যতে লান্ড বেইজ যে টার্মিনাল করা হচ্ছে, এর জন্যও আমরা প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টর খোঁজ করছি। তাই আলটিমেটলি প্রাইভেট সেক্টর একটা বড় ভূমিকা নেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর