বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

হাত বাড়ালেই মিলছে

আনিস রহমান

ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট কক্সবাজার টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ নজরদারির পরও ইয়াবার প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ক্ষণে ক্ষণে কৌশল পরিবর্তন করে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবার বড় চালান রাজধানী ঢাকা হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদকের বড় বড় চালানের টাকা লেনদেন করা হয় ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক ও হুন্ডির মাধ্যমে। এ অবস্থায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘আমরা ডালে ডালে চললেও মাদক ব্যবসায়ীরা চলছে পাতায় পাতায়।’ তারা নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে। ফলে সব অভিযানে মাদক শনাক্ত বা জব্দ করা কঠিন। তাই বলা যায়, ইয়াবার দুষ্প্রাপ্যতা বাড়লেও কমেনি সরবরাহ। আগে মাদক ব্যবসায়ীরা মিষ্টিকুমড়া, শুকনা মরিচ কিংবা বাস-ট্রাকের তেলের ট্যাংক বা গ্যাস সিলিন্ডারে ইয়াবা পাচার করলেও এখন তারা ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি এবং প্রসাধনসামগ্রীর কৌটায় করে ইয়াবার বড় বড় চালান ঢাকায় আনছে। সম্প্রতি অভিযানে এমন বড় বড় চালান আটক করেছে র‌্যাব। যার মধ্যে গত সোমবার মতিঝিল সুন্দরবন কার্যালয় থেকে ৪০ হাজার, ১৬ আগস্ট এলিফ্যান্ট রোডের দুটি বাড়ি থেকে দুই লাখ সাত হাজার ১০০ পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ও ৮ আগস্ট রাজধানীর পূর্বাচল এলাকা থেকে দুই লাখ ছয় হাজার পিস ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মাদক ব্যবসায়ীরা জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট হিসেবে রাজধানী ঢাকাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে নৌপথে আনা ইয়াবার চালানগুলো কক্সবাজার হতে সড়ক, রেল ও বিমান পথে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ইয়াবা যাতে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকতে না পারে সে জন্য ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফে এলিট ফোর্স র‌্যাবের মাত্র দুটি স্থায়ী ক্যাম্প থাকলেও আরও পাঁচটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। দেড়শ জনবল থেকে বাড়িয়ে র‌্যাবে প্রায় চারশ জনবলে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড টিম নিজস্ব দুটি স্পিডবোট নিয়ে নাফ নদে সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। প্রয়োজনে ভাড়া করা স্পিডবোট নিয়েও টহল দিচ্ছে র‌্যাব সদস্যরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, আগে ঢাকা শহরে লোকচক্ষুর তোয়াক্কা না করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেত। এখন পরিস্থিতি তেমন নেই। মাদক ব্যবসায়ীরা অতি সতর্কতার সঙ্গে মাদক বেচাকেনা করছে। অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী এই ব্যবসা ছেড়ে বসে আছে। ফলে অভিযান চালিয়ে এখন আর আগের মতো বড় বড় চালান জব্দ করা যাচ্ছে না। চলমান অভিযানের ফলে চাহিদা মতো জোগান না পেয়ে ইয়াবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে যে ইয়াবা আড়াই থেকে তিনশ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হচ্ছে চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৬৬ লাখেরও বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরা প্রত্যেকে দিনে দুটি করে ইয়াবা (গড় মূল্য ৪০০ টাকা) সেবন করে। সেই হিসেবে দিনে ২৬৪ কোটি টাকা মাদকের পেছনে ব্যয় হয়। বছরে ৯৫ হাজার কোটি টাকার ইয়াবাসহ মাদকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে। এই টাকার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে ইয়াবার উৎসভূমি মিয়ানমারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর