প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাংলাভাই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য এসেছে। এটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল সকালে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর গণভবন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদীর ওপর ওয়াই আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’ এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। যেখানে আজ বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদ একটি বড় সমস্যা সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমরা এই জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য অর্জন করেছি। তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, আত্মসম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি। তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, এই যে নতুন মেট্রোপলিটন গঠন করা হলো এতে অনেক পুলিশ সদস্যের পদোন্নতিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পদেরও আপগ্রেডেশন করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ একসময় অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সেখানে ইপিজেড করেছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আর রংপুরকে যেহেতু একটা বিভাগ করেছি সেখানে বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধাটাও যেন স্থানীয় জনগণ পায় সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
বাঞ্ছারামপুরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়াই সেতু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার তিতাস নদীর ত্রিমোহনায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়াই আকৃতির স্বপ্নের সেতুটি যান চলাচলের জন্য গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর তা খুলে দেওয়া হয়। ওয়াই আকৃতির এই সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করে রাখা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’। এই সেতুটি চালু হওয়ায় বদলে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ত্রিমোহনার দুই অংশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভুরভুরিয়া ও চরলহনিয়া, অপরটি পশ্চিম অংশে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর এলাকায় সংযুক্ত হয়েছে। উদ্বোধনের সময় বাঞ্ছারামপুরে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, নবীনগরের এমপি ফয়জুর রহমান বাদল ও মুরাদনগরের এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সনি আক্তার সুচি, ছয়ফুল্লাকান্দি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তুষার প্রমুখ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১১ সালের ১৬ জুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হয়। সেতুটিতে ২৫টি পিলার, ২৪টি স্প্যান। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু নির্মাণে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তিতাস নদীর ওপর এ সেতু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ হিসেবে কুমিল্লা দিয়ে তা ব্যবহূত হবে বলে জানায় এলজিইডি। এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।