সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে বক্তারা

তফসিলের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তফসিলের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলের সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা থেকে এ দাবি জানানো হয়। জনসভায় সভাপতির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ৩ এবং ৪ অক্টোবর সারা দেশে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের পক্ষ থেকে ১২ দফা লক্ষ্য ও করণীয় ঘোষণা করেন।

কর্মসূচি ঘোষণা শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার দাবি না মানলে টানা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে দেশবাসী এবং সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ফলে সরকার ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তারা এখন পদে পদে ষড়যন্ত্রের ভূত আর দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটানো হবে। জনসভায় যোগ দেওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে বাধা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। নইলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই জনসভায় বেগম খালেদা জিয়ার থাকার কথা ছিল। তাকে ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনই সমাবেশ করিনি। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। গতকাল (রবিবার) কারাগারে একজন আইনজীবী তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি বলে দিয়েছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তিনি তৈরি রয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের সব মামলা প্রত্যাহার এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গতকাল বেলা ২টায় এ জনসভা শুরু হয়। এতে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর ঢল নামে। এক পর্যায়ে মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকেই পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।

কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ থাকলেও বড় রকমের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে সভামঞ্চে তার চেয়ার খালি রাখা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এ মামলায় সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। সাজানো মামলায় তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে প্রধান সাক্ষী মুফতি হান্নানকে নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাকে ফাঁসি দিয়ে এই মামলা শেষ করে দেওয়া হয়েছে। ৬২ জন সাক্ষী শেষ হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে ধরে এনে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর মামলার নতুন করে চার্জশিট দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এ মামলার শুনানিকে আমরা কখনই গ্রহণ করতে পারি না। আমরা আশা করব, বিচারক ন্যায়বিচার করবেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত নন, তারেক রহমানসহ অন্য যারা আছেন তাদের বেকসুর খালাস দেবেন। কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে সরকার প্রতারণা করছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছেলেমেয়েদের পেটানো হয়েছে। তাদের মুক্তি দিতে হবে।

জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আগামী দিনে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্যই আমাদের রাজপথে নামতে হবে। বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় আদেশ শুনবেন না। তাদের সময় শেষ। আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন।’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে তারাই ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, দেশে এখন জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। সবাই একদিন রাজপথে নামলে এ সরকারের পতন হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এটা বাকস্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। এ আইনের ৩১, ৩২, ৪৩ ধারা আরও ভয়ঙ্কর। নির্বাচনের আগে এই আইন পাস করা হয়েছে, যাতে সরকারের অপকর্মগুলো প্রকাশ না হয়। আমরা ক্ষমতায় গেলে সাত দিনের মধ্যেই এ আইন বাতিল করা হবে। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আজ থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এটা শেষ হবে সরকারের পতনের মধ্য নিয়ে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আপনারা রাস্তায় নামুন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবেই হবে।’ 

মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার জাতীয় ঐক্য ভাঙতে শুরু থেকেই চেষ্টা করছে। এখন জাতীয় ঐক্য হলে ভালো, না হলে ক্ষতি নেই। বিএনপিকেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি, এটাকে দুর্বলতা ভাববেন না। খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র মুক্তির স্বার্থে শয়তানের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করতে আমাদের আপত্তি নেই। ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে স্বৈরশাসন কায়েম করেছে সরকার। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে অতীতে পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। রাজপথ দখল করতে না পারলে কাউকেই আমরা কাছে পাব না। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সীমান্ত পাহারা দেন, যাতে আওয়ামী লীগের কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। এ দায়িত্ব নেতা-কর্মীদের নিতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামের পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায়  চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, মাহবুবে রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নিরব, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, আফরোজা আব্বাস ও রাজীব আহসান।

সর্বশেষ খবর