সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বনেতাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরছেন আজ

প্রতিদিন ডেস্ক

নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন করার জন্য ‘যথেষ্ট সুন্দর পরিবেশ আছে’ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও থাকবে। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার আগে গত শনিবার ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে জানান, আগের সরকারগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো নির্বাচন কমিশন গঠন করত। আর তার সময়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে ‘এই স্বচ্ছতা’ আনতে পেরেছে।

গত ১০ বছরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার নির্বাচন হয়েছে এবং সেখানে মানুষ উৎসবের আমেজে ভোট দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি যাচাই-বাছাই করেন, অবশ্যই আপনাকে স্বীকার করতে হবে, বর্তমানে ইলেকশন করার মতো সুন্দর পরিবেশ আছে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করতে পারবে।’ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে সাম্প্রতিক নির্বাচনের উদাহরণ টানেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হলেও সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর জয় পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই দেখলেন, আমাদের প্রার্থী মাত্র আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গেল। এত কম ভোটে হারল, কই আমরা তো ওই ভোট পরিবর্তন করা বা হাত দেওয়ার মতো কিছু করিনি। আমাদের প্রার্থীও সেভাবে নিয়েছেন। এটা কি প্রমাণ করে না যে এখন ইলেকশন করার মতো যথেষ্ট সুন্দর পরিবেশ আছে?’

আগামী নির্বাচনেও সেই পরিবেশ থাকবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে। আমার রাজনীতি কিসের জন্য, আমি ক্ষমতায় থেকে কী কাজ করছি— আমি কি নিজের ভাগ্য গড়ছি? আমার ছেলেমেয়ের ভাগ্য গড়ছি? না, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়ছি?’ 

বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে বেসরকারি খাত একা কিছু করতে পারে না। বেসরকারি খাতের কাজ করার সুযোগ সরকারকেই করে দিতে হয়। তার সরকার তা করে দিয়েছে।

গত ১০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের পরও যারা ‘উন্নয়ন হয়নি’ বলে অভিযোগ করেন, তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন— ‘চোখ থাকলেও যদি কেউ অন্ধ হয়, তাকে কি আপনি কিছু দেখাতে পারবেন? আমার মনে হয় না।’ দেশের সাধারণ মানুষ ওরকম ভাবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু খুশি।’

ভারতের আসামে সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখের বেশি মানুষকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা তাদের বের করে দেওয়ার যে হুমকি দিচ্ছেন, তা নিয়ে ‘বিচলিত’ কিনা শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হয়তো ওদের নিজস্ব পলিটিক্স। আমি তো মনে করি না যে কোনো অবৈধ বাংলাদেশি সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী, যথেষ্ট মজবুত, কেন সেখানে গিয়ে অবৈধ হবে?’ তিনি বলেন, ‘এখন তাদেরই নাগরিক, তারা যদি কাউকে অবৈধ বলে আর বৈধ বলে, এটা তাদের ব্যাপার।’

রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বেশি কাদের সহযোগিতা পেয়েছেন— এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষ। কারণ তাদের জমি। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি সংস্থা। সারা বিশ্বই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ বিশ্বনেতাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরছেন আজ : যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফর শেষে আজ ঢাকা ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী বিমান সকালে পৌঁছবে ঢাকার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এবারের জাতিসংঘের অধিবেশন ও বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে নিরঙ্কুশ সমর্থন  পেয়েছেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দ্ব্যার্থহীন আস্থার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবসহ অন্যরা। এর বাইরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে আরও উন্নত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদও দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং ওই দিন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিবের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সংহতি এবং পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গুতেরেস বলেন, ‘অনেক দেশ এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।’ এ ছাড়া সম্মেলনের সাইডলাইনে শেখ হাসিনা ডাচ রানী ম্যাক্সিমা এবং এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্সটি কালজুলাইদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তার সঙ্গে দেখা করেন। এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও ইভিএম নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সাধারণ অধিবেশনের বাইরে তিনি রোহিঙ্গা সংকট, সাইবার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা এবং বিশ্বের মাদক সমস্যা সংক্রান্ত সমস্যাসহ প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেন। শেখ হাসিনা মার্কিন চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ ও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করেন। এগুলো হলো— বৈশ্বিক সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস)-এর ‘ইন্টার ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ এবং হংকংভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের ‘স্পেশাল ডিস্টিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড।

ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের সব কর্মীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, ফিরতি ফ্লাইটের সময় পাইলট, বিমান ক্রুসহ সব কর্মীর ডোপ টেস্ট করা হবে। গত শুক্রবার লন্ডন যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে কেবিন ক্রু মাসুদা মুফতিকে মদ্যপ অবস্থায় অফলোড করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার গোয়েন্দা সংস্থার করা তদন্ত কমিটি বিমানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার পর মাসুদা মুফতিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর