মেহেরপুরের ওরা ক’জন পরিচিত মুখ। কেউবা তাদের ডাকে রক্তচোষা বলে, আবার কেউবা ডাকে রক্তের ফেরিওয়ালা বলে। এরা সবাই ‘আজকের ভালো কাজের’ সদস্য। তবে সংখ্যায় ওরা মাত্র পাঁচজন। ওরা মানুষকে রক্তের বাঁধনে বাঁধতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ওরা বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিক মানুষকে রক্ত দিয়েছে। কখনো নিজেদের কখনোবা তাদের তালিকায় থাকা স্বজনদের শরীরের রক্ত। এরা হলেন— মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের আল ইকরাম সোহাগ, আসিফ ইকবাল শুভ ও তুহিন আহমেদ, মেহেরপুর জেলা শহরের আফসানা বিশ্বাস তিথি এবং নাসিমুল জুনায়েদ। এরা সবাই মেহেরপুর পৌর কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। পাঁচজনের এরা নিজেরাই একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ‘আজকের ভালো কাজ’ নামে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তাদের আজকের ভালো কাজের মধ্যে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি অতি দুস্থদের খুঁজে বের করে তাদের আহারের ব্যবস্থা করেন, বিশেষ দিবসে নতুন পোশাক দেন। নিজেদের প্রতিদিনের জমানো টাকা থেকেই তারা এমন সেবা দিচ্ছেন। কোনো দাতার সহযোগিতা নেন না তারা। মেহেরপুর পৌর কলেজের সহপাঠীরা এদের ‘ফাইভ স্টোন’ নামে ডাকে। ফেসবুকেও কেউ রক্তের আবেদন করলেই তারা রক্ত দিতে ছুটে যান। দলনেতা আল ইকরাম সোহাগ বলেন, একজনের দানকৃত রক্তে আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচে। এ ছাড়া যাদের রক্ত দিচ্ছি তাদের সঙ্গে একটা রক্তের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমি নিজেও ১৪ বার রক্তদান করেছি। রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সেবার অন্তর্ভুক্ত। রক্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসক রক্ত জীবাণুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেন। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস বা অন্য কোনো জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়লে তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
অসুস্থ মানুষকে রক্ত দেওয়াই তাদের কাজ। এ প্রসঙ্গে আফসানা বিশ্বাস তিথি জানান, প্রথম দিকে তাদের দেখলে রক্তচোষা আসছে বলে পরিচিত জনরা সরে পড়তেন। এখন মানুষ রক্ত দিতে আগ্রহী হয়েছে। তাদের টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিমুল জুনায়েদ জানান, তাদের পাঁচজনের জমানো টাকায় গাভী ও ছাগল কিনে দুস্থ পরিবারে পালন করতে দেওয়া হয়। এসব ছাগল বিক্রির লাভের টাকা যেসব দুস্থ পরিবারের রক্তের ব্যাগ কেনার সামর্থ্য থাকে না তাদের আর্থিক সহায়তায় দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের কাজের প্রতি সমর্থন করে আর্থিক এবং অন্যান্য সহযোগিতা করে তাদের বন্ধু তুষার, তুহিন, শাওন, রাব্বি, হাসান, সোহেল, লিখন, জাহিদ, মামুন, শিমুল, মুন্না, খন্দকার মুইজ, কামাল, মশিউর ও আকরাম। তারা বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতে তারা সবাই ব্যবসার সঙ্গে জড়াবেন। তবে এনজিও ব্যবসা নয়। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ‘আজকের ভালো কাজ’ নামের সংগঠনটি মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রতিদিনই রক্ত দিচ্ছে। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই রক্ত দিতে আর ভয় করে না। রক্তের প্রয়োজনে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।