মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সময় এখন কম বিষয়টি কঠিন

মাহমুদ আজহার

সময় এখন কম বিষয়টি কঠিন

সাক্ষাৎকারে কর্নেল অলি আহমদ

নির্বাচনের আগমুহূর্তে ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্যে যাওয়ার ঘোষণাকে ‘বিষয়টি কঠিন’ বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল ড. অলি আহমদ (অব.) বীরবিক্রম। তিনি বলেন, ‘ঐক্য প্রক্রিয়া ভালো উদ্যোগ। তবে সময় হাতে খুবই কম। যত দ্রুত সম্ভব তাদের সঙ্গে যে মতপার্থক্য রয়েছে, তা নিরসন করা জরুরি। আসন ভাগাভাগি ও সরকার কীভাবে চলবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নাও হতে পারে। সবাইকে নমনীয় ও ত্যাগের মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তবে আমি মনে করি, অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো কাজ করা কতটুকু সম্ভব হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিষয়টি খুবই কঠিন।’

গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএসে  নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন এলডিপি-প্রধান অলি আহমদ। খোলামেলা আলোচনায় চলমান রাজনীতি, আগামী নির্বাচন ও সংলাপ-সমঝোতা নিয়েও কথা বলেন সাবেক এই মন্ত্রী। বিএনপি সুসংগঠিত থাকলে নির্বাচনী আন্দোলনের জন্য ২০-দলীয় জোটের বাইরে কারও প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন জোটের অন্যতম শরিক দল এলডিপির সভাপতি ড. অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলকে সঠিকভাবে সংস্কার ও সুসংগঠিত করা গেলে ২০-দলীয় জোটের বাইরে নতুন করে কারও সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এ প্রক্রিয়াটি কার্যকরের সময় খুবই কম। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের অনেকেরই বহুদিন যাবৎ জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গেও সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং তাদের জনসমর্থন নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের দাবি অনুযায়ী দেড় শ আসন দেওয়া হলে ২০-দলীয় জোটকে অন্তত ৫০-৬০টি আসন দিতে হবে। এতে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’ দেশের রাজনীতি এখন কোন পথে— জানতে চাইলে কর্নেল অলি আহমদ বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। সবার মধ্যে এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। জনগণ এখন শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। সরকার ও বিরোধী দলগুলো নিজ নিজ জায়গায় অনড়। মনে রাখতে হবে, দেশটা সবার। সুতরাং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে যেসব বাধা আছে, তা দূর করা জরুরি। অন্যথায় হানাহানি, মারামারি ও রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’ ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে বিএনপিকে দেড় শ আসন ছেড়ে দেওয়া নিয়ে যুক্তফ্রন্টের এক নেতার প্রস্তাব প্রসঙ্গে অলি আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের যদি দেড় শ আসন দেওয়া হয় তাহলে ২০-দলীয় জোটকে ন্যূনতম ৫০-৬০টি আসন দিতে হবে। এতে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। যে বা যারা আসন চাইবে তাদের কাছে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থী থাকতে হবে। অন্যথায় কেন আসন ছেড়ে দেওয়া হবে? ২০-দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আদৌ নির্বাচনে যাবে কিনা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলেই না আসন ভাগাভাগির প্রশ্ন। ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করতে করতে নির্বাচনের দিন সামনে চলে আসছে। এতে ন্যূনতম যে শর্তগুলো নিয়ে ঐক্য হয়েছে তা ব্যাহত হবে।’ ভারসাম্যের রাজনীতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আইনি কাঠামো চান জাতীয় ঐক্যের নেতারা— এমন প্রশ্নে ড. অলি আহমদ বলেন, ‘এ ধরনের আলোচনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। কখনো ২০-দলীয় জোটের সঙ্গেও এ নিয়ে বিএনপি কোনো আলোচনা করেনি। এটি সম্পূর্ণ বিএনপির এখতিয়ার। তারা যদি এ নিয়ে রাজি থাকে, তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। দেশের জন্য মঙ্গল হলে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এতে খুশিই হব।’ সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরীর জনসমর্থন নিয়ে ও ভোট নিয়ে কিছু মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি ‘হ্যা’সূচক জবাব দেন। বৃহত্তর ঐক্যের ঘোষণার পর বিএনপি জোটে কোনো ভুল বোঝাবুঝি আছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গঠনের পর ২০-দলীয় জোটের একটি মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে জোটের সবাই একবাক্যে বৃহত্তর ঐক্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে সম্মতি দিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে একটি বেসরকারি টিভির টক শোয় বলেছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করেছেন, ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে নয়। সুতরাং কোনোটিতেই আমাদের কোনো ধরনের আপত্তি নেই। আমরা দোয়া করি এবং কামনা করি, এই ঐক্যজোট কার্যকর হোক।’ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন হলে এলডিপি বা ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে যাবে কিনা— এমন প্রশ্নে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ব্যাপারে জোটে কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধারণাও দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু জানি, বিএনপি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নয়। আমরাও একমত। আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ছয়বার সভা করেছি। প্রতিটি সভায় বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করেছি।’ নির্বাচনে গেলে আপনারা বিএনপির কাছে কতটি আসন চাইবেন— জানতে চাইলে কর্নেল অলি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমরা কোনো তালিকাও বিএনপিকে দিইনি। গণমাধ্যমেও দিইনি। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি। নির্বাচনে যাব কিনা সেটাই যখন অনিশ্চিত, সেখানে তালিকা নিয়ে কীভাবে আলোচনা হবে!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর