বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ

ডিসেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব : বার্নিকাট

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ডিসেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব : বার্নিকাট

গণভবনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট —বাসস

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে ডিসেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। গতকাল ঢাকার ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। ঢাকায় শেষ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বাংলাদেশের এই উন্নয়ন বন্ধু। তবে ঢাকায় তার ওপর হওয়া হামলার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো অপেক্ষায় আছে বলেও জানান বার্নিকাট। প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে আগামী শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করতে যাচ্ছেন বার্নিকাট। আজ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎই হবে ঢাকায় তার শেষ আনুষ্ঠানিকতা। গতকালই তিনি বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে। বিদায় নিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছেও। আজ দুপুরে পররাষ্ট্র সচিবের এক মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে এই বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের। তার স্থানে নতুন রাষ্ট্রদূতের আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। গতকাল দিনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন বার্নিকাট। চার বছরে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানিয়েছেন, বার্নিকাট এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ‘চমকপ্রদ’ আখ্যায়িত করে ‘এ প্রজন্মই দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’ বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্তব্য করেন। বার্নিকাট বাংলাদেশে উৎপাদিত আম ও লিচুরও প্রশংসা করেন। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে দুপুরে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে আসেন বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। জন্মের পর থেকেই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক। এই গণতান্ত্রিক ধারাকে সামনে আরও শক্তিশালী করা দরকার। তিনি বলেন, আমরা একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য বিরোধী দলও দেখতে চাই। আমরা কোনো দল বা জোটকে সমর্থন দিচ্ছি না। আমরা পুরো প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে এমনটি আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারও আছে। যুক্তরাষ্ট্র সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। রাষ্ট্রদূত বলেন, এমন একটি নির্বাচন দেখতে চাই যাতে মানুষের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। এ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং নির্বাচনী ইশতেহার প্রদর্শনের সমান সুযোগ দিতে হবে। তাহলে জনগণই ঠিক করবে তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কে দেবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। এ দায়িত্ব শুধু তার নয়। গণতন্ত্রে সবার দায়িত্ব রয়েছে।

 সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সকল প্রকার আইন রয়েছে। সেসব আইন কমিশনকে সময়মতো প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচনে সব দলের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দিতে হবে। প্রত্যেক ভোটার যেন নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে, সে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখতে হবে। এসব ঠিক রাখলেই ডিসেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ প্রসঙ্গে বার্নিকাট বলেন, এটি ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এটি বিস্তৃত হওয়া উচিত। সব বিষয় আলোচনায় থাকা উচিত। তিনি বলেন, দলগুলো নিজেরাই আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা আলোচনার বিষয়ে আশাবাদী। সংলাপের পেছনে কোনো ভূমিকা আছে কিনা— এমন প্রশ্নে বার্নিকাট বলেন, ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ উদ্যোগটি চলমান ছিল। রাষ্ট্রদূত বলেন, ঢাকায় দায়িত্ব পালনের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগ তথা অংশীদারীকে পোক্ত করাতেই ছিল আমার পূর্ণ মনোনিবেশ। ব্যক্তিগতভাবে আমি যা কিছু করেছি, আপনাদের সহযোগী হিসেবেই আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। এ দেশের অংশীদার হয়ে ওঠার চেষ্টায় আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কেন? কারণ একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশিদের নয়, বিশ্বকেও চমৎকার একটি স্থান হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এখানে আমি কী করেছি তা বাংলাদেশের মানুষই বলবে।

সর্বশেষ খবর