শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের ১৫ দিন আগে সেনা

বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করার পরামর্শ পুলিশকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের ১৫ দিন আগে সেনা

ভোটের ১৫ দিন আগে থেকে জেলা পর্যায়ে সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট দল কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বিশেষ সভায় এ কথা বলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নূরুল হুদা বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। প্রতি জেলায় থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবেন। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।’ তবে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি, তারা কত দিন নিয়োজিত থাকবেন তা জানাননি সিইসি। সভায় পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা আমরা বলিনি। এটা আপনারা করবেন না। কারণ, এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। যারা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা তারা বিব্রত হন। কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করবেন না। মামলা করবেন না। কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না।’ এদিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে কমিশন জানিয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। এর আগে ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, বাছাই ২ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। বাংলাদেশে এর আগের প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সেনা মোতায়েন হয়েছিল। ভোটের মাঠে সেনা সদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতেই নিয়োজিত থাকেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

কোনো হয়রানি নয় : ‘গায়েবি মামলা’ ও গ্রেফতার, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের আগাম তথ্য সংগ্রহ নিয়ে বিএনপির অভিযোগের মধ্যে নিরপরাধীকে কোনো ধরনের হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি। সভায় অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন। নির্বাচনের সিংহভাগ দায়িত্ব পুলিশের থাকে। ভোটারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বেশি থাকে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবিধানমতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেকমতে কাজ করতে হবে। আমরা কারও ওপর কর্তৃত্ব করব না।’ নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের আশ্বস্ত করে নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তবে কমিশন আপনাদের কর্মকাণ্ড নজরদারি করবে। অলরেডি অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে। তবে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করবেন। ভালোভাবে যাচাই না করে আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এতে আপনাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য একমাত্র পুলিশেরই আছে। তাই বিভিন্ন বাহিনী পুলিশের কাছ থেকেই পরামর্শ নেবে। পুলিশকে এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, ইসি সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অতি উৎসাহী না হতে নির্দেশ মাহবুব তালুকদারের : বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সরকার যদি সরকারি দলের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকে, তাহলে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” তৈরি সম্ভব। ইসির পক্ষে এককভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে পুলিশের বিরাট ভূমিকা আছে। পুলিশ যদি সবার প্রতি সমান আচরণ করে তাহলে তা সম্ভব হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বর্তাবে। এ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হলে ইসিও দায় এড়াতে পারে না। অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।’

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। দেশবাসীকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর।’

ইসির ১৬ নির্দেশনা : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মস্তান, সন্ত্রাসী ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ভোটের আগে-পরে নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি সব দল ও প্রার্থীর প্রতি সমআচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। পুলিশ সদর দফতর, রেঞ্জ ও মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকালের বিশেষ সভায় ১৬ দফা নির্দেশনা ও ১২টি করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেন তিনি। নির্দেশনায় রয়েছে— অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার; বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতকরণ; রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব দফতরের নিরাপত্তা; রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের বাসভবন/বাসস্থানের নিরাপত্তা; আচরণবিধি প্রতিপালনে থাকা নির্বাহী হাকিম ও ইলেকটোরাল এনকোয়ারি কমিটির দায়িত্ব পালনে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিতকরণ; নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ; নির্বাচনী আইনের বিধান সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সুগম করা; নির্বাচনপূর্ব শান্তিশৃঙ্খলাবিষয়ক পদক্ষেপ নেওয়া; ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয়।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ১২ করণীয় : ক. বিভিন্ন বাহিনী কোথায় দায়িত্ব পালন করবে তার স্ট্রাটেজিক প্ল্যান তৈরি; খ. সংকটাপন্ন কেন্দ্রগুলো রেকি করতে সশস্ত্র বাহিনীর একটি টিম ১৫ ডিসেম্বরের পর পুলিশের সঙ্গে থাকবে; গ. রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, র‌্যাব, কোস্টগার্ড কোথায় কীভাবে থাকবে ঠিক করতে হবে; ঘ. হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতে বিশেষ যান; ঙ. জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা; চ. রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্য সদস্যদের সঠিক ধারণা দেওয়া; ছ. মোবাইল কোর্টের হাকিমদের সহায়তাদান; জ. কৌশলগত পরিকল্পনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এএসপি, ওসির পরামর্শ নেওয়া; ঝ. নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করতে হবে; ঞ. বিনা কারণে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না; ট. সন্ত্রাসীদের নজরদারি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ঠ. সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে ভোটদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ ইসিতে যাবে ১৪ দল : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের একটি প্রতিনিধি দল আজ বিকাল ৪টায় নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর