সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পূর্ণ প্রস্তুতিতে নির্বাচন কমিশন

৪৮ আসন থেকে ইভিএমের জন্য ছয় আসন আজ লটারিতে নির্ধারণ

গোলাম রাব্বানী

পূর্ণ প্রস্তুতিতে নির্বাচন কমিশন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১৬ নির্দেশনা ও ১২টি করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের প্রাথমিক মালামাল মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও। ইতিমধ্যে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। ইসিতে চলছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ। ভোট পর্যবেক্ষণে বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন।

এদিকে এবার প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ জন্য প্রায় ৯০০ ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ইভিএম মেশিনও প্রস্তুত রয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজে হাত দেবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে ২৩ ডিসেম্বর ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠাবে ইসি।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিল শেষ হবে। ২ ডিসেম্বর বাছাই হবে। ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষ হবে আর ১০ ডিসেম্বর হবে প্রতীক বরাদ্দ। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা হাতে পাওয়ার পরই ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করবে ইসি। আর ভোটের সাত দিন আগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত শত কাজের ফর্দ ধরে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের ১৬ দিন আগে আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি হবে। ভোটের সাত দিন আগে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে ব্যালটসহ নির্বাচনসামগ্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথম দফা বৈঠক শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বৈঠক করে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ‘টাইমফ্রেম’ নির্ধারণ করা হয়। যদিও ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। প্রতি জেলায় সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম পাঠানো হচ্ছে। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। এবার রিটার্নিং অফিসার ৬৬ জন। আর সহকারী রিটার্নিং অফিসার থাকছে প্রায় ৬০০ জন।

সবার জন্য সমান সুযোগ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১৬ নির্দেশনা : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার; বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতকরণ; রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; মাঠপর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব দফতরের নিরাপত্তা; রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের বাসভবন/বাসস্থানের নিরাপত্তা; রিটার্নিং অফিসারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদারকরণ; সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা; আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে থাকা নির্বাহী হাকিম ও ইলেক্টোরাল এনকোয়ারি কমিটির দায়িত্ব পালনে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিতকরণ; সারা দেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, গেট, তোরণ ইত্যাদি প্রচারসামগ্রী অপসারণ; নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ; নির্বাচনী আইনের বিধান সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সুগম করা; নির্বাচনপূর্ব শান্তি-শৃঙ্খলা বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণ; ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

একনজরে একাদশ সংসদ নির্বাচন : মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। এবার ৩০০ আসনে ভোটের জন্য সম্ভব্য ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার ১৯৯টি, ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে পাঁচটি করে ভোটকক্ষ থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং দুজন করে পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে সাত লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবে। প্রাথমিক হিসাবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ৬ লাখ ৯৬ হাজার জন প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ২ লাখ ৬০ হাজার এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ৩৬ হাজার জন। এ ছাড়া ৫ ভাগ অতিরিক্ত কর্মকর্তা প্রস্তুত রাখা হবে। সেই হিসাবে প্রিসাইডিং অফিসার ৪২ হাজার ২০৯ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৭ জন। পোলিং অফিসার ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৪ জন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ৫ লাখেরও বেশি সদস্য প্রয়োজন। গেল সংসদ নির্বাচনেও সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

ইভিএমের ছয় আসন নির্ধারণে আজ ‘লটারি’ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোন ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে তা নির্ধারণ করা হবে আজ। এ জন্য জেলা সদর ও সিটি করপোরেশনের ৪৮ আসন থেকে লটারি বা দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ছয়টি আসন নির্ধারণ করা হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি বলছেন, আজ ২৬ নভেম্বর বিকাল ৫টায় নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্বৈবচয়ন করা হবে।  সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ সময় উপস্থিত থাকবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা শহরাঞ্চলের ৪৮টি আসন ইভিমের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বাছাই করেছেন। এর মধ্য থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ছয়টি আসন চূড়ান্ত করবে কমিশন। ‘লটারি’ হবে যে ৪৮ আসনের মধ্যে- ঠাকুরগাঁও-১, দিনাজপুর-৩, নীলফামারী-২, লালমনিরহাট-৩, রংপুর-৩, গাইবান্ধা-২, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-৫, রাজশাহী-২, পাবনা-৫, কুষ্টিয়া-৩, খুলনা-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, ভোলা-১, বরিশাল-৫, টাঙ্গাইল-৫, জামালপুর-৫, শেরপুর-১, ময়মনসিংহ-৪, ঢাকা-৪ থেকে ঢাকা ১৩, ঢাকা-১৫ থেকে ঢাকা-১৮, গাজীপুর-২, নরসিংদী-১ ও ২, নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫, ফরিদপুর-৩, মাদারীপুর-১, সিলেট-১, কুমিল্লা-৬, ফেনী-২, চট্টগ্রাম ৯ থেকে ১১।

সর্বশেষ খবর