সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি সিইসি

হুকুম যেন না নড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

হুকুম যেন না নড়ে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে আইন অনুসরণ করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার  (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। সব প্রার্থীকে সমান চোখে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা হাকিম হিসেবে কাউকে এমন হুকুম দেবেন, যেন সেটা না নড়ে। আইনকানুনের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনাদের।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর। ভোট সামনে রেখে ৭১৬ জন নির্বাহী হাকিমকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে, যা আজও চলবে।

সিইসি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কাজ করবে। কারও নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, কারও নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, কারও নিয়ন্ত্রণে র্যাব থাকবে। তাদের আইনের আলোকে পরিচালনা করবেন আপনারা।’ ভোটের সময় প্রিসাইডিং অফিসারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কঠোর হতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘তাদের ওপর যথেষ্ট চাপ থাকে। ওই এলাকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে প্রিসাইডিং অফিসারের ওপর। তাকে সাহায্য করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদের পরিচালনা করতে যাবেন না। তারা যখনই সহযোগিতা চাইবেন, তাদের করবেন। সহযোগিতা না চাইলে বা সহযোগিতা করার পরিবেশ না থাকলে বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে সহযোগিতা করবেন।’ ভোটের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনাদের তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্ঞানে কমতি ও অভিজ্ঞতার অভাব থাকলে তা পারবেন না।’ সে জন্য বিভিন্ন আইন, দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা, পুলিশ আইন, কার্যপ্রণালি বিধির ধারা তুলে ধরে তা আত্মস্থ করার তাগিদ দেন সিইসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে সমান আচরণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্বকে বিচারকের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘বিচারকরাই এখন ভাগ্য বিধাতার প্রতিভূ। সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা দিয়ে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন।’ আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে নির্বাচন কখনো আইনানুগ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আইনের ব্যবহার সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে সেই আইন আইন নয়, কালো আইন। সবার প্রতি সমান আইনের প্রয়োগ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমরা তা কখনো চাই না।’ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপর থাকার আহ্বান জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘যারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বলেন, ‘আপনারা মনে করেন, আপনারা সবকিছু করতে পারেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। আইনের কোনো অধ্যাদেশ প্রয়োগের সময় জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আইনের প্রয়োগ যেন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে, আপনাদের দ্বারা যেন আইন অসম্মানিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আইনের প্রয়োগ পক্ষপাতহীনভাবে হতে হবে।’ বিজিবি ও সেনাবাহিনী যেহেতু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় কাজ করবে, সেহেতু নির্দেশনা যেন সঠিক হয় সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন সাবেক এই বিচারক। বৈষম্যমূলক আচরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ছাড় দেবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘একটি আইনানুগ নির্বাচনের জন্য আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের প্রমাণ করতে হবে যে আপনারা নিরপেক্ষ ও যোগ্য। একদমই নিরপেক্ষ থাকতে হবে আপনাদের। আচরণবিধি মানতে হবে, আইনানুগ হতে হবে।’ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিহিংসা না রাখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তাগিদ দেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী মতামত প্রকাশ করতে হবে। নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিন গতকাল বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর