শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ ৩৯ দল

২৬৪ আসনে আওয়ামী লীগের ২৮১ মনোনয়ন, ১৭ আসনে একাধিক। ২৯৫ আসনে বিএনপির ৬৯৬ মনোনয়ন। জাতীয় পার্টি ২৩৩। স্বতন্ত্র ৪৯৮। ৩০০ আসনে ৩০৬৫ মনোনয়ন

গোলাম রাব্বানী

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের নামে যত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, এর আড়াইগুণ মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে বিএনপির নামে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৬৪ আসনে জমা দিয়েছেন ২৮১টি মনোনয়নপত্র। অন্যদিকে ২৯৫ আসনে জমা দিয়েছেন ৬৯৬টি মনোনয়নপত্র বিএনপির প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে সারা দেশে ৩০০ আসনে মোট ৩০৬৫টি পূর্ণাঙ্গ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন মনোনয়ন মাগুরা-২ আসনে ৪টি এবং সর্বোচ্চ ঢাকা-১৭ আসনে ২৭টি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ৩৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই, এসব আসন জোটের অন্য দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার ১৭টি আসনে দলের প্রত্যয়ন নিয়ে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে রেখেছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বরের পর জানা যাবে, জোটের কোন দল কতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, বুধবারের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে। প্রার্থিতা বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা  প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। এরপর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামবেন। ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের ২৮১টি, বিএনপির ৬৯৬টি, জাতীয় পার্টির ২৩৩টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ১৩৫৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে মোট ২৫৬৭টি। এর বাইরে স্বতন্ত্র ৪৯৮টি মিলিয়ে মনোনয়নপত্রের মোট সংখ্যা ৩০৬৫। আসাদুজ্জামান জানান, ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগের নামে ২৮১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিএনপির নামে ২৯৫টি আসনে জমা পড়েছে ৬৯৬টি মনোনয়নপত্র।

নির্বাচন-বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের ব্যানারের প্রার্থীরা। আর নির্বাচনী মাঠে মূল লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এবার আওয়ামী লীগের চেয়ে মনোনয়ন বেশি জমা পড়েছে বিএনপির।

জানা গেছে, মামলার কারণে বিএনপি এবার প্রায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রত্যয়ন দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে রেখেছে। দলটির নেতারা বলছেন, কোনো কারণে কারও প্রার্থী হওয়া আটকে গেলে বিকল্প প্রার্থী ভোট করবেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিএনপির সমঝোতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এই জোটেও কোন দল কতটি আসনে লড়বে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধিত ৩৯টি দলের নামেই মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অন্য দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্রদের নামে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে জেপির ১৭টি, সাম্যবাদী দলের ৩টি, গণতন্ত্রী পার্টির ৮টি, ন্যাপের ১৪টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩টি, জাসদের ৫৩টি, তরিকত ফেডারেশনের ২০টি ও বিকল্পধারার ৩৭টি। এ ছাড়া জাকের পার্টি ১০৮টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

বিএনপির রাজনৈতিক মিত্রদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে গণফোরামের ৬১টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩৭টি, জেএসডির ৫১টি, এলডিপির ১৫টি, বিজেপির ১১টি, এনপিপির ৯০টি, জাগপার ৬টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪৯টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ১৫টি ও কল্যাণ পার্টির ৫টি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সিপিবির ৭৭টি, বাসদের ৪৯টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের ৩২টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ১২টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২১টি, খেলাফত মজলিসের ১২টি, বিএমএলের ১৭টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ১টি ও বিএনএফের ৭১টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ফাঁকা আসন : ঠাকুরগাঁও-৩; নীলফামারী-৩ ও ৪; লালমনিরহাট-৩; রংপুর-১ ও ৩; কুড়িগ্রাম-২; গাইবান্ধা-১; বগুড়া-২, ৩, ৪, ৬ ও ৭; রাজশাহী-২; কুষ্টিয়া-২; বরিশাল-৩ ও ৬; পিরোজপুর-২ ও ৩; ময়মনসিংহ-৪ ও ৮; কিশোরগঞ্জ-৩; মুন্সীগঞ্জ-১; ঢাকা-৪, ৬ ও ৮; নারায়ণগঞ্জ-৫; সুনামগঞ্জ-৪; সিলেট-২; মৌলভীবাজার-২; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২; ফেনী-১ ও ৩; লক্ষ্মীপুর-২ এবং চট্টগ্রাম-২ ও ৫।

বিএনপির ফাঁকা আসন : টাঙ্গাইল-৮, মৌলভীবাজার-২, কুমিল্লা-৭, লক্ষ্মীপুর-৪ ও চট্টগ্রাম-১৪।

অন্যান্য সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর সংখ্যা : দশম সংসদ নির্বাচন : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৮৭৭ জন, দল ১২টি। বিএনপি ও সমমনা দলের বর্জনের মুখে সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রই জমা পড়েছিল মাত্র ১১০৭টি। তাতে ১২টি দল অংশ নেয়। এর মধ্যে বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থী হন ৮৭৭ জন।

সর্বশেষ খবর