মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মরে গেলেও ভোট বর্জন করব না : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও অভিযোগের ঘটনার দুই দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান এ কথা বলেন। যতই হামলা নির্যাতন হোক কোনোভাবেই ভোট বর্জন করা হবে না বলে  জানান তিনি। সেই সঙ্গে মরে গেলেও ভোট দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই নেতা। তিনি বলেন, ‘মরে গেলেও আমরা ভোট বর্জন করব না। আমার লাশ নিয়ে ওরা (ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচন কমিশনের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। আমার আঙ্গুল তো থাকবে, এ আঙ্গুল দিয়ে টিপ দেবে। নির্বাচন হতে হবে। জঘন্য ধরনের আক্রমণ করা হচ্ছে; তবুও আমরা তা (বর্জন) করব না। দুপুরের পরে নির্বাচন ভবনে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ড. কামাল হোসেন। ভোটের প্রচারে বাধা-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন,  সবখানে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব করে সরকার যদি ভাবে ভোট বর্জন করা হবে, এ সুযোগ তারা পাবে না। আমরা কমিশনকে বলেছি-২৪ ঘণ্টার মধ্যে বা দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আনতে হবে। এরপরই ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।

তিনি বলেন, ন্যূনতম একটা ভোটের পরিবেশ চাই আমরা। সবখানে একটি দলের পোস্টার রয়েছে, অন্য কারও পোস্টার নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম, আমার দীর্ঘজীবনে এমন পরিবেশ দেখিনি। কমিশনের ক্ষমতা রয়েছে সব হয়রানি বন্ধের। কমিশন যদি পরিবেশ নিশ্চিত না করে আমাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে দুয়েকদিনের মধ্যে বলেন তিনি। কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাসও পেয়েছেন ড. কামাল।

ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন বিব্রত বোধ করলে হবে না; কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে পুরোচিত্র বলেছি। আলোচনার শেষ দিকে তারাও বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছে। ইসির সঙ্গে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মইন খান, মোস্তফা মহসীন মন্টু, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইসিকে বিএনপির চিঠি : আচরণবিধি বহির্ভূতভাবে পুলিশি অভিযানের নামে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, তল্লাশি ও প্রচারে বাধা-মারধরের অভিযোগ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীসহ প্রায় ৩১টি জেলার বিভিন্ন আসনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশি আচরণ, বিনা কারণে গ্রেফতার, হয়রানি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র পুনরায় উল্লেখ করা হলো। জরুরি ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি। আট পৃষ্ঠার চিঠিতে হয়রানির ঘটনা যে জেলায় ঘটছে বলে দাবি করা হয়েছে তা হলো— ঢাকা মহানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, ভোলা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, রংপুর, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। বিএনপির একজন প্রতিনিধি এসে ইসি সচিবালয়ের ডেচপাচে ‘১৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত’ এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দেন।

ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অমির ওপর হামলার অভিযোগ : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমির ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালাতে গেলে তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গতকাল নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন আমান অমি।

সর্বশেষ খবর