বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

৩০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিদেশিদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, পাকিস্তানসহ ৩০টি দেশের কূটনীতিক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

বৈঠকসূত্র জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের জানানো হয়, বর্তমানে দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। বিএনপি প্রার্থীদের ওপর শুধু হামলা-মামলাই নয়, গ্রেফতারও করা হচ্ছে। বিরোধী দল-মতের প্রার্থীদের প্রচারণাও চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না তারা। এ অবস্থায় সরকারকে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহযোগিতাও চায় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, বৈঠকে ৩৫টি দেশের কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, তুরস্ক, ডেনমার্ক, ফিলিপাইন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, তাবিথ আউয়াল, জেবা খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তিনি একই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে বলে তিনি আশা করেন। নির্বাচনী সহিংসতা বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সব দলকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে।

ড. কামাল হোসেন পরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তারা যা বলেছেন তার সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণের মিল আছে। তাই তাদের কাছে কূটনীতিকদের খুব বেশি প্রশ্ন ছিল না। পুলিশ অসাধারণভাবে তৎপর বিরোধী দলের প্রার্থীদের হামলা, মামলা ও গ্রেফতারে। এত পুলিশ রাস্তায় টহল দিতে আমি দেখিনি। কাউকে দেখলেই তারা ধরে বসে। কারণ ছাড়াই ধরছে। মানুষ পুলিশি সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। তারা চাচ্ছে বিরোধীরা যেন নির্বাচনে না আসতে পারে। তবে তার কথা শুনে পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণে তা মনে হয় না। আশঙ্কার কথা উনাকে নিজেই বলে এসেছি। তার নিষ্ক্রিয়তা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি।’ তবে কূটনীতিকরা কী বলেছেন, তা তিনি জানাননি। কূটনীতিকদের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চান— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিই, সেজন্য তারা বহু অনুরোধ করেছে। আমরা তো নির্বাচনে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। মামলা ও গ্রেফতার হবে না। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি।’

সর্বশেষ খবর