বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইএসআইর সঙ্গে জামায়াত নেতাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে

দেশের রাজনীতিতে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা-২

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইএসআইর সঙ্গে জামায়াত নেতাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে

দেশের রাজনীতিতে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার ঘনিষ্ঠ যোগের অভিযোগ দীর্ঘকালের। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাতাবরণে এ তৎপরতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু বিএনপি নেতারাই নন, আইএসআইর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারাও। আইএসআইর এজেন্টরা জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এ যোগাযোগ মৌলবাদী এই দলটির একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত বিস্তৃত। আইএসআই জামায়াতকে যে এ দেশে তাদের প্রধান মিত্র মনে করে, নথিপত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি নথিতে দেখা যায়, আইএসআই এজেন্টরা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও জেদ্দায় দলটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ২৫ অথবা ২৬ মে বৈঠক করেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন জেদ্দা জামায়াতে ইসলামীর আমির শহীদ উল ইসলাম। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কী কৌশল নেওয়া যায় দুই পক্ষ তা নিয়ে আলোচনা করে। দুবাইয়ের এ বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া দলের আমিরের সঙ্গে আলাপ করে দলের আর্থিক চাহিদার ব্যাপারে আবারও বৈঠকে বসবেন বলে জানান। ওই বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান স্বীকার করেন, ২০১৩ সালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা আইএসআইর আস্থাভাজন ছিলেন। তার সঙ্গেই গোয়েন্দা সংস্থাটি যোগাযোগ রক্ষা করত। নথি থেকে জানা যায়, দুবাইয়ের ওই বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশে তাদের লোকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না করতে আইএসআই এজেন্টদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে যোগাযোগ করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আশ্বাস দেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে জোট টিকিয়ে রাখা হবে। এ ছাড়া আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে পাকিস্তানি সংস্থাটির সহযোগিতা ‘যথারীতি’ অব্যাহত থাকবে।

ওই বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারতের মদদে সরকার দলের নেতাদের গুম করছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে তিনি ‘কড়ায় গণ্ডায় তা শোধ দেওয়ার’ অঙ্গীকার করেন। তিনি ইসলামী সম্মেলন সংস্থাসহ (ওআইসি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তান যাতে সমর্থন দেয় সে ব্যবস্থা করতে আইএসআইকে অনুরোধ জানান। এ ছাড়া চীনসহ পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যাতে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে, সে ব্যাপারে পাকিস্তানকে ভূমিকা রাখতে বলেন। এ বৈঠকে আইএসআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা জামায়াতে ইসলামীকেই বাংলাদেশে তাদের প্রধান অবলম্বন ও প্রকৃত বন্ধু মনে করে। তারা মনে করে, এ দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকা উচিত। আইএসআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারবিরোধী তুমুল রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন। এজন্য ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে। সরকারকে একটি অবাধ নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে চীনের প্রভাব কাজে লাগানোর কথাও বলেন আইএসআই প্রতিনিধিরা। দুবাইয়ে অবস্থানরত আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেন। তিনি আইএসআই কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদীর কাছ থেকে সব পরামর্শ ও নির্দেশনা গ্রহণ করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিএনপি সভাপতি জাকির হোসেন বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ মেহমুদের সঙ্গে সব তথ্য আদান-প্রদান করেন এবং বসের (তারেক রহমান) সব সিদ্ধান্ত আইএসআইকে জানান। একাধিক নথি থেকে জানা যায়, জুনে দুবাইতে জাকির হোসেনের সঙ্গে এক বৈঠকে আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ এক মাস আগে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তার এ বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। শহীদ মেহমুদের সঙ্গে দুবাইতে আরেক বৈঠকে জাকির হোসেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিপরীতে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অনুযোগ করেন। জামায়াত যাতে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে এজন্য দলটির ওপর চাপ দিতে জাকির হোসেন আইএসআইর এই এজেন্টকে অনুরোধ জানান। জামায়াত পরে প্রার্থী প্রত্যাহার করেছিল। ওই বৈঠকেই আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ জাকির হোসেনকে বলেন, সংস্থাটির নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদী জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন। আইএসআইর পক্ষ থেকে বিএনপিকে বলা হয়, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভবিষ্যতে আরও বড় খেলার জন্য এ জোট টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। [আরও প্রতিবেদন আগামীকাল]

সর্বশেষ খবর