শিরোনাম
শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা

জামায়াত-বিএনপির টাকা নিন নৌকায় ভোট দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াত-বিএনপির টাকা নিন নৌকায় ভোট দিন

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ দিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি নেই। কারণ, তারা একটা চক্রান্তে ব্যস্ত, ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। নৌকার জোয়ার দেখে ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও চক্রান্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করছে। তাদের চক্রান্তের হাত থেকে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে। নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে।

গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বাসভবন সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে রাজশাহী, নড়াইল, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধায় নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, প্রতিটি আসনের বিপরীতে তিন-চারজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। অর্থ আত্মসাৎ, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং এতিমের টাকা চুরির মাধ্যমে অর্জিত টাকা তারা এখন নির্বাচনে ব্যয় করছে এবং এটাই তাদের চরিত্র। তারা ভোটের জন্য টাকা দেবে। কারণ বিএনপি-জামায়াতের এখন অনেক টাকা তাদের কাছ থেকে অর্থ নিন আর নৌকা মার্কায় ভোট দিন এটাই এখনকার স্লোগান। আপনাদের বলব, এটাই জনগণকে বলতে হবে, যারা অর্থশালী, তাদের অর্থ নেন; আর নৌকা মার্কায় ভোট দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে বাণিজ্য করে না। বাণিজ্য করেছে বিএনপি। আজ সে জন্য তাদের ঘরে কোন্দল। এক একটা সিটে তিন-চারজন করে নমিনেশন দিয়েছে। এরপর সেই সিট উনারা অকশনে দিয়েছে। যে যত বেশি টাকা দিতে পেরেছে, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রচার-প্রচারণায় না থেকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় তারা মুজিব কোট বানাবে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ব্যাজ বানাবে এবং ওইভাবে গিয়ে তারা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ওপর বদনাম দেবে এবং ভোট কারচুপি করবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমে ভিডিও কনফারেন্সে রাজশাহীর জনসভায় জেলার ছয় প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের কথা শোনেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে নড়াইলের সংসদ সদস্য হিসেবে তুলে ধরে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নড়াইলবাসীর কাছে নৌকার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ‘হীরার টুকরা’ বলে অভিহত করেন। এরপর টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকাকে জয়যুক্ত করতে হবে। আমি জানি অনেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। আমরা হয়তো সবাইকে মনোনয়ন দিতে পারি নাই। বিগত নির্বাচনের দুই বছর থেকে বারবার সার্ভে করেছি ও দেখেছি, কীভাবে ইলেকশনে জয়ী হওয়া যায় সেভাবে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা একটা কথা স্পষ্ট বলতে পারি যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন নিয়ে বা প্রার্থী নির্বাচনে বাণিজ্য করে না। বাণিজ্য করেছে বিএনপি। আজকে সেজন্য তাদের ঘরে ঘরে কোন্দল, এক একটি সিটে তিন-চারজনকে করে মনোনয়ন দিয়েছে। যার জন্য আজকে তারা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে, নিজেরা মারামারি করে। নিজেদের অফিসে আগুন দেয়। তারপর আবার অন্যের ওপর দোষ দেয়। ইতিমধ্যে তারা আমাদের অনেক নির্বাচনী অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে, ভেঙে দিয়েছে আবার আমাদের দুজন কর্মীকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপর আবার নালিশ করে। এটাই হচ্ছে চরিত্র। একদিকে তারা চক্রান্ত করছে। আরেকদিকে তারা টাকা খরচ করে নির্বাচনকে হয় বানচাল আর নয়তো ভোট কারচুপি করার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জানে, বাংলাদেশের জনগণ জানে সারা দেশে নৌকার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। প্রত্যেকটি মানুষ নৌকার ভোট দিতে উদগ্রীব।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করব।’ এ সময় নড়াইল-২ আসনের নৌকার প্রার্থী সুধাসদনের পাশে বসা ছিলেন। আরেক প্রার্থী নড়াইল-১ কবিরুল হক মুক্তি ভিডিও কনফারেন্সিংস্থলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজশাহী জেলায় সংযুক্ত হন। সেখানে তিনি নৌকা ও শরিক জোটের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজশাহী-১ আসনের বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী ২-আসনের মহাজোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের ডা. মনসুর রহমান ও রাজশাহী-৬ আসনের শাহরিয়ার আলম নৌকায় ভোট চান। এ ছাড়াও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহীর প্রতিটি আসনের নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এরপর একে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সুধাসদন প্রান্তে যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান।

সরকারের সঙ্গে শতাধিক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার একাত্মতা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৫ জন সাবেক আইজিপিসহ ৮৫ জন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আগামীতে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ওয়াদা করেন তারা। সংহতি প্রকাশকারীদের মধ্যে সাবেক আইজিপি ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে পিএসপি অফিসার একজন, সাবেক এডিশনাল আইজিপি ১৮ জন,  ডিআইজি ২৪, এডিশনাল ডিআইজি ৩, এআইজি ও পুলিশ সুপার ১১ এবং অতিরক্তি পুলিশ সুপার ১৩ জন রয়েছেন। 

সর্বশেষ খবর