নির্বাচনের বাকি মাত্র ৮ দিন। এখনো কারাগারে বিএনপি জোটের ধানের শীষের ১৫ জন প্রার্থী। নিজ নিজ এলাকায় তারা প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছেন। আবার মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ নিজ বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকায় ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামতেই পারছে না। বিএনপি বলছে, দেশে এখন ন্যূনতম নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তফসিলের পর গ্রেফতার, মামলা-হামলা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে উল্টো। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরপরই নতুন করে গ্রেফতার ও মামলা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারণার মাত্র এক সপ্তাহ আছে।
কারাগারে থেকে ভোটে অংশ নেওয়া ধানের শীষের ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন— গাজীপুর-৫ আসনের প্রার্থী ফজলুল হক মিলন, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, মাগুরা-১ মনোয়ার হোসেন খান, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, রাজশাহী-৬ আবু সাঈদ চাঁদ, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ জামায়াতে ইসলামীর আ ন ম শামসুল ইসলাম, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-৪ জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ-১ এস এম জিলানী, ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হালিম, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ এবং কুষ্টিয়া-১ বিএনপির প্রার্থী রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। এদের মধ্যে গত বুধবার গ্রেফতার হন বাচ্চু মোল্লা, গাজী নজরুল ইসলাম ১৬ ডিসেম্বর এবং ফজলুল হক মিলন গত ১৩ ডিসেম্বর। অন্যরা প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই কারাবন্দী। এ ছাড়া কক্সবাজার-২ আসনের হামিদুর রহমান আজাদ স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও বিএনপি তাকে সমর্থন দিয়েছে। সেখানে কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
জানা গেছে, এসব প্রার্থীর কারামুক্তির জন্য এক বা একাধিক মামলায় জামিন নেওয়া প্রয়োজন। তবে এর জন্য তাদের যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে, তা কোনোভাবেই ভোটের এই কয়েক দিনে সম্ভব নয়। সংষ্লিষ্টরা বলছেন, এসব আসামিকে একটি মামলায় প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, সেখানে বিফল হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং সেখানেও না মিললে জামিনের আবেদন করতে হবে হাই কোর্টে। এ প্রক্রিয়া শেষ করে আপিল বিভাগের মুখোমুখি হওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া বেশ কয়েক প্রার্থী জামিন পাওয়ার পর অন্য মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাই ৩০ ডিসেম্বরের আগে কারামুক্ত হয়ে তাদের নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংলাপে সকলের সামনে কথা দিয়েছিলেন যে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আর গ্রেফতার হবে না। একটা কথাও তার সরকার রাখেনি বা তিনি রাখতে দেননি। গণগ্রেফতার চলছেই। আমাদের সংসদ সদস্য প্রার্থী যারা এখন পর্যন্ত ১৪ জন কারাগারে। আমাদের প্রতিদিন দুইশ থেকে তিনশ গ্রেফতার হচ্ছে। হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। জামিন নিয়ে বেরোলে হাই কোর্টের গেটে আবার গ্রেফতার করেছে, আবার নতুন মামলা দিয়ে জেলে ঢুকাচ্ছে। অত্যাচার-নির্যাতনের শেষ নেই। এখন নতুন করে শুরু হয়েছে আমাদের প্রার্থিতা বাতিল। সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানি না।’এদিকে ভোলার সংসদীয় ২, ৩ ও ৪ আসনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছেন না বলে স্থানীয় বিএনপি অভিযোগ করে বলছে, তারা নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের বাধার মুখে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা কিংবা গণসংযোগ করতে পারছেন না। গতকাল দুপুরে ভোলা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভোলা-১ (সদর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভোলা সদর আসনেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা হচ্ছে। প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ জনকে আহত করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭ জনকে। নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘন করা হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ।’ প্রচারে পিছিয়ে ঢাকার প্রার্থীরাও। ঢাকা মহানগরে ১৫ জন ধানের শীষের প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী ও ঢাকা-১১ আসনের প্রার্থী শামীম আরা বেগমের গণসংযোগ চোখে পড়ার মতো। বাকিরা এখনো পুলিশি ভয়ে প্রচারণাই চালাতে পারছেন না। ঢাকায় ধানের শীষের প্রার্থীদের পোস্টারও দেখা যাচ্ছে না।এ প্রসঙ্গে ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাদের প্রচারণায় মাঠেই নামতে দিচ্ছে না প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। আবার পুলিশও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও পোস্টারও সাঁটাতে দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।