শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধীরে ধীরে মাঠে নামছে বিএনপি

শেষ সপ্তাহে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চায় ধানের শীষের প্রার্থীরা
২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করার চিন্তা

মাহমুদ আজহার

ধীরে ধীরে মাঠে নামছে বিএনপি

ভোটের বাকি আর মাত্র সাত দিন। ধীরে ধীরে মাঠে নামতে শুরু করেছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। ১০ ডিসেম্বর থেকে ভোট প্রচারণা শুরু হলেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েকদিন আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। তবে শেষ তিন-চার দিন সারা দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। দলের হাইকমান্ড থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রার্থীদের। গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারে নামতে দেখা যায় ধানের শীষের প্রার্থীদের। কোথাও কোথাও বড় ধরনের শোডাউনও লক্ষ করা যায়। এ দিকে ঢাকায় ২৭ ডিসেম্বর বড় ধরনের শোডাউন করতে চায়। ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, আগামী ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর নির্বাচনী মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফিরে আসতে পারে। তখন ধানের শীষের প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাবে। এ ধারণা থেকেই সেইভাবেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ধানের শীষের প্রার্থীরা। বিশেষ করে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর ঢাকার অধিকাংশ প্রার্থীই মাঠে নামতে পারেননি। ২৪ ডিসেম্বরের পর থেকেই তারা রাজধানীর অলিগলি চষে বেড়াবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সেনা মোতায়েনের পর নির্বাচনী মাঠ কেমন হয়, তা দেখতে চাইছেন তারা। সে জন্য ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল মনে হলে নির্বাচনী মাঠে পুরোদমে নেমে পড়বে ধানের শীষের প্রার্থীরা। তবে আমাদের কাছে এ তথ্যও আছে, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের বাসা-বাড়িতে থাকতে দেওয়া হবে না। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হবে। আশা করি, সামনে পরিস্থিতি ভালোই হবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। আমরা আশা করব, সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করবেন এবং গণতন্ত্র রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঢাকা শহরে বিএনপির কোনো  পোস্টার নেই। পোস্টার লাগাতে গেলে আওয়ামী লীগ মারে না, পুলিশ মারে। গুলি করে, ঠ্যাং ভেঙে দেয়। হুমকি-ধমকি দিয়ে তারা আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। এর চেয়ে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে? একদিকে আওয়ামী সন্ত্রাস অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।’ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরে ধানের শীষের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে ঢাকায় জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় ধানের শীষের প্রার্থীদের। ঢাকার প্রচারণায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তা নিয়েও প্রার্থীরা খোলামেলা কথা বলেন বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে। এ সময় কিছু সমস্যার সমাধানও বলে দেন মির্জা ফখরুল। পরে মির্জা ফখরুল প্রার্থীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। চলমান প্রতিকূল পরিবেশেও ধৈর্যের সঙ্গে প্রচারণা চালিয়ে যেতে বলেন বিএনপি মহাসচিব। ভোটের ফলাফল পর্যন্ত যে কোনো মূল্যে কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে এবং কোনো  কেন্দ্রে এজেন্টশূন্য রাখা যাবে না বলেও প্রার্থীদের দিক-নির্দেশনা দেন বিএনপি মহাসচিব।  এ দিকে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশেই বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে নামার চেষ্টা করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে নির্বাচনী সভা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেনি। ফলে নাগরিকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। সরকার বিরোধী দলশূন্য মাঠ তৈরির কাজে ব্যস্ত। কিন্তু মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। মানুষ এবার জেগে উঠেছে। জনগণ এবার ভোটকেন্দ্রে যাবে। কেন্দ্র পাহারা দেবে। ভোটের ফলাফল নিয়েই ঘরে ফিরবে ইনশা আল্লাহ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ আসনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গতকাল শান্তিনগর, রাজারবাগ, চামেলিবাগসহ কয়েকটি এলাকায় সহস াধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে ট্রাক্টর দিয়ে মাঠ চাষ করছে। সেখান দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। আমার কর্মীরা ধানের শীষের পোস্টারও লাগাতে পারছে না। গোডাউনে পোস্টার পড়ে আছে। লিফলেট তৈরি করতে গেলে ছাপা খানাকে না করে দেওয়া হচ্ছে। আমি ও আমার স্ত্রী একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? তারপরও ভোটের শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। এ দিকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী গতকাল মুগদাপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা-৩ আসনে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি শোডাউনও করেন। পঞ্চগড়-১ আসনে ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের পক্ষে গত ১৫ দিন ধরে তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর এলাকার অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। পঞ্চগড়-২ আসনেও ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার তুলেছেন বিএনপির তরুণ নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ। বোদা-দেবীগঞ্জ এলাকায় তিনি নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। নোয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার তুলেছেন। গতকাল তিনি বাদ জুমা চৌমুহনী পৌরসভা ও এলখাসপুর এলাকায় ধানের শীষের ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তার সহধর্মিণী শামিমা বরকত লাকীসহ বেগমগঞ্জের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সঙ্গে ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমরা ধানের শীষের পক্ষে ভোটের জোয়ার সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। প্রতিদিনই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারসহ নানাভাবে জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে। তারপরও মোটামুটি সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে আমরা বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’

ভোটের দিন জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং কোনো ধরনের জোরজবরদস্তি হলে তা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা ৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল তিনি শ্যামপুরের লাল মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ভোট চান। এ সময় সালাহ্উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভোটের আর মাত্র ৮ দিন বাকি। অথচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে ধরনের উৎসব থাকার কথা তা নেই। মানুষ আজ আতঙ্কিত। নির্বাচনের পরিবেশ বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোট চাইতে মাঠে নামতে পারে না। তাদের পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর তারা পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করছে।’ প্রতীক পাওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে খুব জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-৫ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী। গতকাল বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীকে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বিএনপির এই নেতা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মাতুয়াইলের বিভিন্ন এলাকা ও গলি চষে বেড়িয়েছেন। এতে তার সঙ্গে যোগ দেন দলের বিপুল-সংখ্যক নেতা-কর্মী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নবী উল্লাহ নবী বলেন, ‘এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এরপরও শত বাধা সত্ত্বেও গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মোটামুটি সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে জয় পেয়ে এই আসনটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেব ইনশা আল্লাহ।’

গতকাল সকাল ১০টায় রামপুরা টেলিভিশন ভবন থেকে শুরু করে ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন ঢাকা-১১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শামিম আরা বেগম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুলিশ ও প্রতিপক্ষের প্রবল বাধার মুখেই আমরা সীমিত পরিসরে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার নির্বাচনী এলাকার  কোথাও ধানের শীষের কোনো পোস্টার টানাতে পারছি না। যে কয়টি পোস্টার লাগানো হয়েছে তাও দুর্বৃত্তরা ছিঁড়ে ফেলছে।’ ঢাকা-১০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান গতকাল ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান। পরে বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ধানমন্ডি-৭ নম্বর রোডের এনাম র‌্যাংগস প্লাজা মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলোতে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও মত পথের মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তার নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ মার্কায় ভোট প্রদানের আহ্বান জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আবদুল মান্নান বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সব দল যেন নিজ নিজ নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারে সে লক্ষে এলাকায়  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ দিকে রাজধানীর বছিলা এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান ঢাকা-১৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালাম। গতকাল বাদ জুমা তিনি ওই এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং পরে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর