শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না : ফখরুল

নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দি পৌর স্টেডিয়াম মাঠে গতকাল বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভোটের প্রচারণায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের নামতে না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ভোটের দিন কোনো বাধা না মানার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের ধানের শীষের প্রার্থী এস এম আকরামের পক্ষে এক নির্বাচনী সভায় বিএনপি মহাসচিব এ হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘ধানের শীষের প্রার্থী মানেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। আপনার একটা ভোটে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। এটা মনে করে বাড়ির সবাইকে, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর সকালে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন। সেদিন কোনো বাধা আমরা মানব না। ভোট দিয়ে ভোট গণনা পর্যন্ত থেকে বিজয় নিয়ে তারপর ভোটকেন্দ্র ছাড়ব।’

নারায়ণগঞ্জের  সোনাকান্দি পৌর স্টেডিয়াম মাঠে এই নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি এ টি এম কামালের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর পরিচালনায় এতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় মির্জা ফখরুল এস এম আকরাম ছাড়াও ধানের শীষের প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে কাজী মনিরুজ্জামান মনির, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মাওলানা মনির হোসেন কাশেমীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের ভোট দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ছোট একটি ট্রাকের ওপর মঞ্চ নির্মাণ করে এই নির্বাচনী সভায় ট্রাকের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন ছিল। মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছিল ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি। বিএনপি মহাসচিব গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় রওনা হন নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মদনপুর সড়কপথ দিয়ে মহাসচিব যাবেন জেনে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি মাইক্রোবাস সড়কের ওপর এলাপাতাড়ি রেখে দিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ২০ মিনিট পরে গোয়েন্দা ও পুলিশ সদস্যরা ওই মাইক্রোবাস সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল সচল করে। সেখানে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীরা রাস্তার ওপর টায়ার পুড়িয়ে নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিতে থাকে। পরে মহাসচিবের গাড়িবহরকে পুলিশের সহায়তায় অন্যপথ দিয়ে বন্দরের পৌর স্টেডিয়ামে প্রবেশ করায়। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভোট চুরি করতে ওরা কিন্তু ওস্তাদ। আগের রাতেই নাকি ব্যালট বাক্স ভরে রাখবে তারা। আগের রাত থেকেই পাহারা দিতে হবে কেন্দ্র। সেনাবাহিনী, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর ভাইদের বলতে চাই, আপনারা নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন। আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। এটাই জাতি আশা করে। এটাই আশা করে আপনারা জনগণের স্বার্থে থাকবেন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না।’ নির্বাচন কমিশনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ ও ‘অসহায়’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে বলি- কোমর সোজা করে দাঁড়ান। সংবিধান ও রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটা আপনি পালন করুন। নিরপেক্ষভাবে এ দেশে যেন নির্বাচন হয়, জনগণ যাতে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় পদত্যাগ করুন, না পারলে চলে যান। এ দেশের মানুষ কোনো অন্যায় মেনে নেবে না।’ বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের হাতে মাত্র ৬ দিন। এই ৬ দিনে নারায়ণগঞ্জের বিপ্লবী মানুষকে সংগঠিত করুন। ভয় পাবেন না, ভয়ের কিছু নাই। মানুষ তো একবারই মরে। আপনি মায়ের জন্য, আপনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে বুক সোজা করে দাঁড়ান। আমার দাবি আমার হক আমি আদায় করে নেব। ভোট দেওয়াটা আমার হক, ভোট আমি দেব-এখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। আজকে এখানে এসেছি আমরা অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে। এই বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমাদেরকে বিজয়ী করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের এটা মনে রাখতে হবে।’

গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন : এর আগে সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি উচ্চ আদালত কর্তৃক দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবস্থা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন একটি প্রহসনের ও তামাশায় পরিণত হয়েছে। সবার কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো অবস্থা এখানে আছে কিনা। নির্বাচনের  কোনো মাঠ  নেই। বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এমনকি বিচারব্যবস্থা আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে। এটা আমাদের কাছে শুধু বিস্ময়কর নয়, অত্যন্ত আতঙ্কের। এই কথাগুলো বলছি, অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি।’ সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বাংলাদেশ মাইনোরিটি পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর