রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিলেটের বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে

গতকাল সিলেটে আওয়ামী লীগের জনসভার একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তেই ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। যে অভিযোগ উঠেছিল, তা বানোয়াট প্রমাণ হয়েছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আল্লাহর রহমতে তা আমরা করছি। এই একটি সিদ্ধান্তই বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে।’ গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জনসভায় বিপুল লোকসমাগম হয়। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আসতে শুরু করেন। শেখ হাসিনা মাঠে পৌঁছার আগেই পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। জনসভায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মহাজোটের সব প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা সিলেট এসে পৌঁছান। তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহ পরান (রহ.) ও গাজী বোরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করেন। এরপর সার্কিট হাউসে তিনি জোহরের নামাজ আদায় করেন। বিকাল  সোয়া ৩টার দিকে তিনি জনসভায় যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানুয়ারিতে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলাম। আগামী নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি, তাদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করেছিল। সারা দেশে তারা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচয় করে তারা।’ তিনি বলেন,  ‘২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা মানুষ  পোড়ানো, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু জানে না।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। তার প্রিয় ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমি বা আওয়ামী লীগ মামলা দিইনি। সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। মায়েদের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিই। সারা দেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। মোবাইল ফোনে আমরা টুজি থেকে থ্রিজি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে এসেছি। আগামীতে ফাইভ জি চালু করব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে আমরা আলো জ্বালাব। বাংলাদেশ এক সময় নেতিবাচক পরিচিতি পেয়েছিল। এখন বাংলাদেশ মানে উন্নয়ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নয়নে কাজ করে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, যাতে সরকার গঠন করে আবারও আপনাদের জন্য কাজ করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি একেক আসনে চার-পাঁচজনকে নমিনেশন দিয়েছে। পরে অকশন দিয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আবার ক্ষমতায় এলে লন্ডনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলেও মন্তব্য করে তিনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সিলেট বিভাগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। প্রবাসী যারা আছেন, তারাও বিনিয়োগ করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, আগে চায়ের নিলাম শুধু চট্টগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যাতে হয়, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা সব সময় নৌকায় ভোট দেয়। তাদের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করেছি। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, সিলেটের উন্নয়নের জন্য স্কুল, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। গত জানুয়ারিতে এসে অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করে যাই। সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেটের সব জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে, তার উদ্যোগ নিচ্ছি। সিলেট-ঢাকা চার লেন সড়ক দ্রুত শুরু হবে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। হাওরাঞ্চলে যাতে শিল্প গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা করছি।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী ভাঙন ঠেকাতে, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ দেশ। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুত্ফুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর