সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে মোস্তাফা জব্বার

প্রাথমিক পর্যায় থেকে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে

শামীম আহমেদ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রাথমিক পর্যায় থেকে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে

আমরা প্রচলিত অর্থে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উত্তীর্ণদের শিক্ষিত বলি। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। কারণ শিল্প বিপ্লবের পরে কর্মসংস্থানের ধরন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছিল, তা এখন আর কাজ করছে না। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে কাজ করতে পারে এমন ডিজিটাল মানুষ আমরা এখনো তৈরি করতে পারছি না। এ জন্য আমাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। গত শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মানবসম্পদ তৈরির বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটালভাবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। তাই এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট, শি পাওয়ার প্রজেক্ট, হাইটেক পার্ক প্রশিক্ষণ প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে নিজে উদ্যোক্তা হয়েছে, আবার অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে কারিগরি, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। আধুনিক তথ্যনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে এবং নেতৃত্ব দিতে এর বিকল্প নেই। মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজে আমি বিশেষ নজর দিয়েছি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি ১১ মাস ৬ দিন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বেশিরভাগ সময় গেছে আগের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে। কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা। তবে এসব সম্পন্ন হয়েছে আমার হাত ধরে। সে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হোক অথবা ৪জির উদ্বোধনই হোক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ সময় আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লিখিত দলিল। কৃষিভিত্তিক দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। এটার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে রাষ্ট্র, সমাজ এবং নাগরিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য উপস্থাপন করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০০৯ সালের আগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ২৬ লাখ, এখন সে সংখ্যা ৯ কোটি। ব্র্যান্ডউইথ ছিল ৮ জিবিপিএস, এখন ৮শ জিবিপিএস, মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪৬ লাখ, এখন সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। আর্থিক লেনদেনের শতকরা ৪০ ভাগ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়। সরকার ই-নথি এবং ই-টেন্ডার চালু করেছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ৩শ সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা খাতে ডিজিটালাইজেশনের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিসি) সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষা খাতে আইসিটি ডিভিশনের আওতায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব নামে ৭ হাজার ৭০০টি ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। প্রায় দেড় লাখ ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তর করা হয়েছে। শিক্ষকদের সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবে আমার প্রতিষ্ঠান ‘বিজয় ডিজিটাল’ প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইকে ডিজিটালে রূপান্তর করেছে। এই শিশুদের আর ক্লাসরুমে পাঠ্যবই নিয়ে যাওয়ার কোনো দরকার পড়বে না। স্কুলের হাজিরা থেকে শুরু করে ফলাফল তৈরি সবকিছুই ডিজিটাল করা হচ্ছে। বেশ কয়েক হাজার শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি এবং পড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচলিত ধারা বাদ দিয়ে এখন ডিজিটাল সেবা আসছে। ২০০৮ সালে সফটওয়্যার এবং সেবা খাতে রপ্তানি ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার, এখন সেটা ১ বিলিয়ন ডলারে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা ৮০টি দেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করছি। ২৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরি হচ্ছে। আমরা আমদানিনির্ভর জাতি থেকে রফতানিকারক জাতিতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের দেশে মোবাইল ফোন সেট এবং ল্যাপটপ তৈরি ও রফতানি হচ্ছে। আমি নিজে নেপাল ও নাইজেরিয়াতে এসব ল্যাপটপ রফতানি করেছি। আমাদের হাই-টেক পার্কগুলোতে জায়গার তুলনায় দ্বিগুণ কোম্পানি জায়গার জন্য আবেদন করেছে। কারণ আমাদের দেশে কম মূল্যে মানবসম্পদ পাওয়া যায়। যেটা অন্য কোনো দেশে সম্ভব না। একটা ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। কানেকটিভিটির বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে ২০০৮ সালে কোনো কানেকটিভিটি ছিল না। মোবাইলের ২জি ছাড়া অন্য কোনো সেবা ছিল না। এখন মোবাইলে ৪জি সেবা পৌঁছেছে এবং ৫জি সেবা টেস্ট করা হচ্ছে। ফাইবার অপটিক কানেকটিভিটি পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে। দেশের মাত্র ৭৭২টি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবগুলোতে কানেকটিভিটি পৌঁছে গেছে। বাকিগুলোর জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে অর্থ বরাদ্দও হয়ে গেছে। ১০ বছরের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু আকাশে ওড়ার সময়।

 

সর্বশেষ খবর