শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রস্তুতি শেষ ভোট উৎসবের

কাল সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে প্রচার, পরশু কেন্দ্রে যাবে ব্যালট পেপার, ইভিএম মক ভোটিং আজ

গোলাম রাব্বানী

প্রস্তুতি শেষ ভোট উৎসবের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংঘাতমুক্ত-শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটের দুই দিন আগে মাঠে নামবেন এবং ভোটের পরের দিন পর্যন্ত থাকবেন। নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসারদের সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। কমিশনও ঢাকা থেকে সবকিছু মনিটরিং করছে। আজ থেকে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল চালু হচ্ছে।

প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন প্রার্থীরা। ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের প্রচারণা শেষ হবে কাল শুক্রবার সকাল ৮টায়। আর ২৯ ডিসেম্বর ৪০ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে সব সামগ্রী। রবিবার ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনে ভোট হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। তাই, ২৯৩ আসনে ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হবে। আজ নির্ধারিত ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ মহড়া হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬টি আসনের সব কেন্দ্রে একযোগে মহড়া কার্যক্রম চলবে।

এদিকে ব্যালট বাক্সসহ প্রাথমিক নির্বাচনী মালামাল আগেই পৌঁছে দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া গত দুই দিনে অধিকাংশ আসনে ব্যালট পেপারও পাঠিয়েছে ইসি। ২৯ ডিসেম্বর ব্যালটসহ মালামাল ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তবে ২৯৩ আসনের মধ্যে যেগুলোর এখনো ঝামেলা রয়েছে (আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষা) সেসব আসনে ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য এলাকার ব্যালট পেপারসহ অধিকাংশ আসনে ব্যালট বিতরণ হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যালট পেপার পৌঁছাতে দুটি হেলিকপ্টারও প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তার মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় ভোটের সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। ইসিসূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ২২৩ আসনের ব্যালট মুদ্রণ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। প্রার্থিতা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় প্রায় ৭০ আসনের ব্যালট মুদ্রণ বাকি। ইসির সিদ্ধান্ত পেলে আজকালের মধ্যেই সেগুলোও ছাপানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে কাল ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সব আসনের ব্যালট মুদ্রণ সম্পন্ন হবে। এবারের ভোটে ৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে এখন মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১ হাজার ৮০০-এর বেশি প্রার্থী। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ৯০ জনের বেশি, দলীয় প্রার্থী প্রায় ১ হাজার ৭৪৯ জন। ১০ ডিসেম্বও থেকে প্রচারে রয়েছেন তারা। ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি ভোটারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৫ হাজারেরও বেশি ভোটকক্ষ রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টহলে রয়েছেন বিজিবির সদস্যরাও। এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা থাকবেন ২ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। তারা জেলা/উপজেলা/মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে (নডাল পয়েন্ট) ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন এবং সার্বিক দিক লক্ষ্য রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এবারে সব মিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৬ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে। এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন ক্যাডারের ৬৩৭ জন কর্মকর্তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তারা নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে জানিয়েছে, এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনী প্রশিক্ষণও শেষ। ভোট গ্রহণের জন্য সিল-প্যাডসহ নির্বাচনী সামগ্রী ইতিমধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর আগে শুধু ব্যালট পেপার ছাড়া অন্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে স্টাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, অমোচনীয় কালির কলম, হেসিয়ান বড় ব্যাগ, হেসিয়ান ছোট ব্যাগ, চার্জার লাইট, ক্যালকুলেটর, স্ট্যাপলার মেশিন ও স্টাপ পিন ইত্যাদি সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে সাধারণ এলাকার ভোট কেন্দ্রের পাহারায় একজন পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য, মেট্রোপলিটন এলাকার ভোট কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ভোট কেন্দ্রে দুজন পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহলে থাকবেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামায় ভোটারদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের উদ্দেশ্যই হলো ভোটারদের মনে আস্থা তৈরি করা। সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলে ভোটারদের মনে আস্থা বাড়বে। সংঘাত পরিহার করতে দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। সিইসি বলেন, এ সুযোগে আমি সব রাজনৈতিক দলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করি- নির্বাচন যেন নির্বাচনের মতো হয়। সহিংসতা, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, তর্ক-বিতর্ক, হাঙ্গামা পরিহার কওে কেবল নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনে নিবদ্ধ থাকার জন্য অনুরোধ করি। এক লিখিত বিবৃতিতে ভোটারদের ‘নির্ভয়ে’ কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

প্রচারের শেষ সময় কাল শুক্রবার সকাল ৮টা : একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে সব সামগ্রী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম রয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। ৩০ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের প্রচারণা শেষ হবে শুক্রবার সকাল ৮টায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে প্রার্থী ও দলকে অবহিত করবেন।

৬ আসনে ইভিএম : সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) মক (অনুশীলনমূলক) ভোট গ্রহণ আজ ২৭ ডিসেম্বর হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬টি আসনের সব কেন্দ্রে একযোগে অনুশীলন কার্যক্রম চলবে। ২৬ নভেম্বর নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য ৬টি আসন চূড়ান্ত করে ইসি। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব আসন চূড়ান্ত করা হয়। আসন ৬টি হলো ঢাকা-৫, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২। ৪৮ আসনের মধ্য থেকে এ ৬টি আসন চূড়ান্ত করা হয়। কমিশনসূত্রে জানা গেছে, ইভিএমে ভোটের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ৬ আসনে মোট ৮৪৫টি কেন্দ্র রয়েছে। আসনগুলোয় মোট ভোটার প্রায় ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন। ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর