বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনী অর্থনীতি মন্দা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চায়ের কাপে টুংটাং শব্দ আছে, আমেজ নেই। ‘সম্মানিত ভোটার ভাই ও বোনেরা’ বলে গ্রামে-গঞ্জে ভোট চেয়ে প্রার্থীর পক্ষে সীমিত প্রচারণা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। রাত জেগে লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানোর তাগিদ আছে কিন্তু ব্যস্ততা নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন সারা দেশে বিরাজমান এই পরিবেশ মূলত নির্বাচনী অর্থনীতির মন্দা অবস্থাটিই ফুটিয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই উৎসব, নির্বাচন মানেই মিছিল, মিটিং আর কর্মী সমর্থকদের প্রচারণা, পদচারণায় মুখরিত জনপদের ছবিটিই সবার চোখে ভেসে ওঠে। নির্বাচনকে ঘিরে যানবাহন, প্রিন্টিং, আপ্যায়ন, মাইকিং, সামাজিক গণমাধ্যমের ব্যবহারে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। অনেক প্রার্থী গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে কাপড় ও অর্থ বিতরণ করেন। নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করার জন্য কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও চলে অর্থের লেনদেন। এলাকার চায়ের দোকান, মুদি দোকান, শপিং মল, হোটেল, রেস্তোরাঁয় সবখানে চলে নির্বাচনী আড্ডা। স্থানে স্থানে রাস্তার মোড়ে গড়ে তোলা হয় অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প। দলীয় প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক নিয়ে নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে ঢেকে দেওয়া হয় সেসব ক্যাম্প। গ্রামে-গঞ্জে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম এবং টাকার প্রবাহের ফলে বাড়ে ভোগ ও চাহিদা। অর্থনীতিতে আসে চাঙ্গাভাব। এবারও শুরুর দিকে তেমন একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রত্যাশা থাকলেও দিন যত ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে সেই আমেজে ভাটা পড়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমরা আশা করেছিলাম অন্তত ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত কাজ হবে ছাপাখানায়। কারণ পোস্টার লিফলেট ছাড়াও ভোটার স্লিপ, ছোট ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন ধরনের ব্যাজসহ নির্বাচনী অনেক কিছুই ছাপাখানা থেকে করা হয়। এ জন্য অনেক ছাপাখানা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাগজ, কালিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিল। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের হতাশা ততই বাড়ছে। ঢাকায় অনেক ছাপাখানা কাজ করতে পারছে না। মফস্বলের অবস্থাও বলার মতো নয়। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলির মাইকের পাইকারি বাজারে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে তারা যত বেশি মাইক বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন, সে তুলনায় বিক্রি-বাট্টা ভালো না। আর সভা সমাবেশের জন্য প্যান্ডেল ও মাইক ভাড়ার চাহিদা খুব একটা না বাড়ায় এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এখন হতাশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার এক মাইক ব্যবসায়ী আফসোস করে বলেন, বছর দশেক আগেও সংসদ নির্বাচনে তাদের দোকানে যে পরিমাণ ভাড়ার তাগিদ থাকত এখন তার অর্ধেকও নেই।

নির্বাচনে মাইকের ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে পরিবহন ভাড়া। ছোট আকারের ট্রলি, রিকশা বা ভ্যানে মাইক বেঁধে চালানো হয় প্রচার-প্রচারণার কাজ। এবার এসব পরিবহনে প্রচারণাও খুব একটা চোখে পড়েনি। সভা-সমাবেশে প্যান্ডেল বাধা, তাঁবু টানানো, চেয়ার ভাড়া, কর্মী-সমর্থকদের আহারের জন্য ডেকোরেটরের দোকানেও দেখা যাচ্ছে না খুব একটা ভিড়। ফলে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তি আয়ের যে আশা করছিল, সে আশা তাদের পূরণ হয়নি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মোটামুটি একটা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে বলে মনে করা যায়। ফলে নির্বাচনী অনুষঙ্গের সঙ্গে জড়িত যেসব পেশাজীবী রয়েছেন যেমন- প্রিন্টিং, ট্রান্সপোর্ট, মাইকিং তাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। সেদিক থেকে বলতে গেলে নির্বাচনী অর্থনীতিতে মন্দাভাব রয়েছে। তবে এই মন্দাভাব আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি কিংবা জিডিপিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

সর্বশেষ খবর