শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সামরিক বাহিনীকে কেউ বিতর্কিত করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামরিক বাহিনীকে কেউ বিতর্কিত করবেন না

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বিএনপি শুরু থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে সেনাবাহিনীকে ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার’ দেওয়ার কথা বলে আসছে। কিন্তু কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্টভাবে মানা আছে। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওর কতগুলো ধারায় নির্বাচন কমিশন তার কিছু কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে পারে। কিন্তু সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর সদস্যকে নয়। কাজেই আর্মি এলো, কিছু করল না- এভাবে আর্মিকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ না করাই ভালো। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-বিস মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ-সিজিএস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কথা বার বার আসছে। বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী আসার পরও (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির) কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। প্রশ্ন হলো, হওয়ার কথা ছিল কি? তার মতে, সেনাবাহিনী প্রতিটি ইলেকশনে আসে। নির্বাচনে সামরিক বাহিনী ওই কাজটিই করে যে কাজটি তাকে করতে বলা হয়। তারা আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করে না। তাদের টার্মস অব রেফারেন্স বা টিওআরে যা বলা আছে, তার বাইরে কেউ যায় না সাধারণত, শুধু যুদ্ধের সময় ছাড়া। ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি শুরু থেকে বলে আসছি, সামরিক বাহিনীকে আপনি সিভিল পাওয়ার যখন ডাকবেন এবং সিআরপিসিতে যখন আসে, তখন সামরিক বাহিনীর কমান্ড চ্যানেল গোস আপ টু দি ম্যাজিস্ট্রেসি। তার বাইরে কিছু নয়।

এই গোলটেবিল বৈঠকে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। সিজিএস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের সভাপতি ইজাজ আহমেদ। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার আন্দোলনের নেত্রী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, অবসারপ্রাপ্ত সচিব সুনীলকান্তি বোস, যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিলস স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভুঁইয়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ এজাজ কবির প্রমুখ। অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, সবারই ভোট দেওয়া উচিত। এটা সবার নাগরিক অধিকার। কিন্তু সব পরিবহন বন্ধ থাকলে আমরা কীভাবে ভোট দেব? আজকের সমস্যা আগামীতে তরুণদের সামলাতে হবে। তাদের মধ্যেও বিভক্তি আছে। তারাও ভোট দেবে। আবার বাধাও দেবে। এই তরুণদের অনেকে রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। তরুণদের স্বাধীন চিন্তা থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সরকারের ওপর দোষারোপ না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তরুণরা ভোট দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, গণতন্ত্র বলতে শুধু ভোট নয়। আমি ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে থাকতে চাই না। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, সংখ্যালঘুরা শক্তিহীন ও সম্পদহীন হওয়ায় নির্বাচনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রার্থীদের ওপরও হামলা হচ্ছে। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, তরুণ ভোটারা শঙ্কিত। আস্থা ফেরাতে ইসির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভোটের দিন কেন অ্যানালগ থাকবে? বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীরা কীভাবে ভোট কেন্দ্রে যাবেন? শারমিন মুরশিদ বলেন, যেখানে যার আধিপত্য, সেখানে দুর্বলদের ওপর হামলা হয়। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব জনগণের ভয় দূর করার। একটু গণতন্ত্রচর্চায় জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর