শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ : ড. কামাল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, পুলিশ আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা এসেছিলেন আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে নিজ চেম্বারে পুলিশ কর্মকর্তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশকে জানোয়ার বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, আমি তাদের ওই অর্থে তো বলিনি। তারা মানুষের মতো ভূমিকা রাখবে, আমরা সবাই সেটাই আশা করি। আমি সব সময়ই পুলিশের প্রশংসা করেছি। এখনো আমাদের প্রত্যাশা পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনে বাধা-বিঘ্ন তৈরি করা হবে। এরপরও আমরা মাঠ ছাড়ব না। সব ধরনের বাধা রুখে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনা নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সুষ্ঠু ও অবাধভাবে সবকিছু করতে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারকে বারবার সতর্ক করার পরও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যেভাবে প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে, তাতে সরকারি দলের সমর্থক ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারছে না। এতে করে আমি গভীরভাবে আশঙ্কা করছি যে, দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়তই আমাকে সাবধানে চলাচল করতে বলছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমরা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি। এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা ড. কামালের নিরাপত্তার খোঁজখবর নেন এবং তার সঙ্গে আলোচনা করেন। ড. কামালের চেম্বার থেকে বেরিয়ে ডিসি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা তার কাছে সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলাম। নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ তার রয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ভোটের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে এবং নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ ব্যাপকভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। আর ড. কামাল একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি যদি নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করেন, সে ক্ষেত্রে আমরা তাকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত এবং সেটিই আমরা তাকে জানিয়েছি। পুলিশ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ কমিশনার সাহেব কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন। তারা এসে আমাকে জানালেন, পুলিশ কমিশনার আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আমি তাকে আসতে বলি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ কমিশনার ফোনে জানান যে, নির্বাচন কমিশনার তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাই তাকে সেখানে যেতে হচ্ছে। পরে অন্য পুলিশ অফিসাররা আমার কাছে আসেন। তারা আমাকে বলেন, সরকার আপনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চাচ্ছে। আমি তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি, আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আগে দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিন। তারা যেন ভোটকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করুন। আমার এখানে তো সবসময় এসবিসহ (পুলিশের বিশেষ শাখা) অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা জানালেন, আপনার নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার কর্মকাে র শিডিউল আমাদের জানাবেন, আমরা আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেব। পুলিশ এসকর্ট দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঠ ধরে রাখতে হবে। ওরা যেন না বলতে পারে যে সরে গেছে। এটা আমাদের অধিকার। আমরা কেন সরে যাব? শেষ পর্যন্ত যদি অসম্ভব করে দেয়, তখন মানুষ দেখবে।

নির্বাচন থেকে বিতাড়নের সব ব্যবস্থা করেছে ইসি : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ধানের শীষের প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে বিতাড়নের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে প্রশাসন, আইন-আদালত, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী, সর্বোপরি নির্বাচন কমিশন স্বয়ং কাজ করছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও প্রার্থীদের প্রতি নৃশংসতা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের ১০ পৃষ্টার লিখিত বক্তব্য পাঠকালে এ অভিযোগ করেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত ড. কামাল হোসেন থাকতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিকল্পধারার একাংশের সভাপতি নূরুল আলম বেপারী, মহাসচিব শাহ মো. বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নীলনকশার নির্বাচনে ভোট কারচুপির সংবাদ যেন গণমাধ্যমে না আসে, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে নির্বাচন কমিশন। মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, একসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে  থেকে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ, সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না- সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন এমন নীতিমালা জারির মাধ্যমে মূলত মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে গলাটিপে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের এসব বাধানিষেধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করছে যে, নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীনদের নীলনকশা বাস্তবায়নের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন ইন্টারনেটের গতি কমানোর জন্য ফোর জি টু জি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভোট কেন্দ্রে সংঘটিত নানা রকম ঘটনার সংবাদ মিডিয়ায় দ্রুত আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

গণফোরাম সভাপতি বলেন, এই অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের ভরসা এ দেশের জনগণ তথা ভোটারগণ। যারা অতীতে কোনোদিন ভুল করেনি, তারা এবারও ভুল করবে না। সব ভয়-শঙ্কাকে জয় করে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে এদেশের মানুষ আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটযুদ্ধে সব আগ্রাসনকে মোকাবিলা করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, দেশের মালিকানা জনগণ ফিরে পাওয়ার জন্য এবং আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে।

সর্বশেষ খবর