শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট কেন্দ্র পাহারা দিন, জনগণ নৌকার পক্ষে : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট কেন্দ্র পাহারা দিন, জনগণ নৌকার পক্ষে : শেখ হাসিনা

দলীয় নেতা-কর্মীদের নিরাপদে চলাচল করার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো বিশ্বাস নেই। তারা জানে তারা নির্বাচনে জয়ী হবে না, তারা হেরে যাবে। তাই হেরে যাওয়ার প্রাক্কালে যে কোনো রকমের ছোবল মারতে পারে। সেদিকে আপনারা সজাগ থাকবেন। জনগণের জোয়ার আমাদের পক্ষে, নৌকার পক্ষে, ইনশা আল্লাহ আমরা জয়ী হব। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন গতকাল ধানমন্ডির ৫ নম্বরে ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কুমিল্লা, যশোর, টাঙ্গাইল, পাবনা ও পঞ্চগড় জেলায় নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিকাল সোয়া ৩টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। প্রথমেই কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নৌকা ও মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ভোটের দিনে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকা- করতে এলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন। ওইদিন আপনারা নিরাপদে থাকবেন। কারণ ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, ৪৪১ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৭০টি অফিস-বাড়িঘর তারা ভাঙচুর করেছে, ৫৪ স্থানে বোমা হামলা করেছে। পেট্রলবোমা হামলাও চালানো হয়েছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের এই চরিত্রটা বদলাতে হবে। কারণ, এই সন্ত্রাসী কর্মকা- বাংলাদেশের মানুষ কখনো পছন্দ করে না, পছন্দ করবেও না। সবাইকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কাজ যদি কেউ করতে আসে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে তাদের তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। স্বাধীনতার পক্ষশক্তির বিজয়ী হওয়া আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলার জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার একটি বিজয় নিয়ে আসবে। আমরা আবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করব। শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় এবং তার সুফলটা মানুষ পায়। আমি জানি, বিএনপি-জামায়াতের চরিত্রটাই হলো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারি- নানা অপকর্মে এরা লিপ্ত থাকে। ২০১৩, ‘১৪ ও ‘১৫-তে এরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। তারা ধ্বংস করতে জানে। তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, বাংলাভাই সৃষ্টি করেছে। এরা শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারে। কাজেই এ ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী, যারা দেশের সম্পদ লুটপাট করে, দেশের সম্পদ পাচার করে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে- এরা বাংলাদেশের মানুষকে কিছু দিতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলাম। আমরা চাই প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক। কারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সেখানে কোনোরকম বাধা বা প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি করা না হয়। প্রত্যেকে নির্বাচনে অংশ নেবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কাকে ভোট দেবে। আমি বিশ^াস করি বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবে। জনগণের জোয়ার আমাদের পক্ষেই আছে।

টেলিফোনে কথা বললেন টুঙ্গিপাড়ায় : পাঁচ জেলায় ভিডিও কনফারেন্স শেষে নিজ নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়ার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে টেলিফোনে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া জি টি হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রেড ক্রিসেন্টের সাবেক সভাপতি শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন। প্রধানমন্ত্রী তার ফোনেই কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ার মানুষের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি বাবা, মা, ভাইসহ আমার পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে আপনাদের ভালোবাসা বুকে নিয়ে বেঁচে আছি।  এ সময় রসিকতার ছলে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সারা বাংলাদেশে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছি। কিন্তু আমার টুঙ্গিপাড়ায় আমাকে ব্যবস্থা করে দেয়নি। যাই হোক, আগামীতে আমরা ভিডিওতে কথা বলব। টুঙ্গিপাড়া এসে আবার জনসভা করব। কারণ আপনারা জানেন যে এই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার জন্ম। সেখানেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন এ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে।

 কিন্তু তিনি তা করে যেতে পারেননি। আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা যেভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ৩০ ডিসেম্বর সকালে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকায় ভোট দিন। ইনশা আল্লাহ বিজয় আমাদের নিশ্চিত। এ সময় টুঙ্গিপাড়ায় শেখ কবির হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার খায়ের, পৌর মেয়র শেখ আহম্মদ হোসেন মির্জা, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। জনসভাটি ছিল হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী নয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবেই গর্ববোধ করি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের কল্যাণে নিজেকে কতটুকু নিয়োজিত করতে পারলাম সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কিন্তু নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন্তা করি না। আমি হচ্ছি বাবার কন্যা ‘ফাদারস ডটার। সন্তান হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। আমি জাতির পিতার কন্যা। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে এটুকুই চাইব আপনারা সবসময় আমাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবেই আপনাদের একান্ত আপনজন হিসেবে দেখবেন। সেটাই আমি চাই। সেটাইতেই আমি গর্বিত বোধ করি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়। গতকাল দুপুরে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব, এটা একটা দায়িত্ব পেয়েছি। কাজ করার সুযোগ পাই এর মাধ্যমে। দেশের কল্যাণ করার একটা সুযোগ পাই। সেটাই আমার কাছে বড়। সরকারি কর্মচারীদের তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি থাকি বা না থাকি, আপনাদের কাছে আবেদন এটাই থাকবে আপনারা কিন্তু আপনাদের দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করবেন, কারণ আপনারা সরকারি কর্মচারী। তিনি বলেন, আপনাদের বেতন-ভাতা কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকাতেই হয়।

সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছর একটানা থাকায় অনেক কাজ করে যেতে পেরেছি। এখনো বহু কাজ বাকি। সেটাও নির্ভর করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। ৩০ তারিখে যদি তারা ভোট দেয় তাহলে আবার আসতে পারব এবং কাজগুলোকে শেষ করতে পারব। নইলে মানুষের ভাগ্য মানুষ বেছে নেবে। এখানে আমার কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক বেগম নাসরিন আফরোজ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান, প্রটোকল অফিসার খুরশীদ আলম, সহকারী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর