শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাহস করে ভোট কেন্দ্রে যাবেন : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার ভয়ের পরিবেশ তৈরি করলেও এতে কোনো ভয় নেই। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করব। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষ পরিবর্তন চায়। সবাই মিলে ভোটের মাধ্যমেই এই বিজয় অর্জন করব। গতকাল বিকালে রাজধানীর পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। ড. কামাল হোসেন বলেন, সারা দেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের হেনস্তা ও হয়রানি করা হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর আরেকটি বিজয় অর্জন হবে ভোটের মাধ্যমে। কোনো ভয় নেই। আমরা আজীবনই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আপনারা সাহস করে নেমে পড়ুন, ভোটের বিপ্লব করুন। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনই জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করবে। ধানের শীষে ভোট দিলে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ইনশা আল্লাহ আপনারা বিজয়ী হচ্ছেন। শক্তভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে সকাল সকাল ভোট দিতে যাবেন। ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় হয়েছিল, ৩০ ডিসেম্বর তেমনই বিজয় হবে। দেশের এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, অনেকে ভয় পান। আমরা ভয় পেলে দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। ১৯৯০ সালে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করতে পারতাম না। অতএব, ৩০ তারিখে ভোট দিন এবং ভোট গণনা না করা পর্যন্ত পাহারা দিন। ১৬ কোটি মানুষ। কতজনকে গ্রেফতার করবে তারা? ভয়ের কিছু নেই। দেশব্যাপী মানুষ চরমভাবে বিক্ষুব্ধ হচ্ছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর এর প্রকাশ ঘটবে ভোটের মাধ্যমে।

‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতাসীনদের প্রচারণার দিকে ইঙ্গিত করে ড. কামাল বলেন, উন্নয়ন উন্নয়ন, এটা আইয়ুব খানের প্রত্যাখ্যাত বক্তব্য। ১৯৭১ সালে এটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে তিনি নিয়মিত অসংখ্য ফোনকল রিসিভ করছেন এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা জনগণের বিপুল সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে উন্নয়নের কথা বলে তারা স্বৈরাচার। আওয়ামী লীগ এখন যা বলছে, একসময় আইয়ুব খান ঠিক একই কথা বলত। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়নের এই ধরনের কথা আজ থেকে ৫০ বছর আগে আইয়ুব খানরা বলত। এসব কথা এখন আর চলে না। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। অবশ্যই দেশ উন্নত হবে, কিন্তু সেই উন্নয়ন শুধু উপরের তলার লোকদের জন্য নয়, উন্নয়ন হতে হবে সবার জন্য। এক্ষেত্রে কোনো রকমের ভেদাভেদ চলবে না। বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন হতে হবে সব মানুষের জন্য।

ড. কামাল দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিম্নগামী বলে মন্তব্য করে বলেন, আমি ৬০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। এখন যারা ছাত্র আছেন, আপনারাদের আত্মীয় বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করুন শিক্ষার মান কোথায় আছে। তিনি বলেন, সরকার মানুষকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা শোনাচ্ছে। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানও ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পাশ কাটিয়ে মানুষ ওই প্রবৃদ্ধির কথায় পাত্তা দেয়নি। মানুষ গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এখনো যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এত বাধা, হামলা-মামলা হয়রানির পরও মানুষ এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মালিকানা বুঝে নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

৩০ ডিসেম্বও ভোট বিপ্লব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ধানের শীষে ভোট দিলে আপনারা মুক্ত হবেন। এই প্রতীক কোনো দলের প্রতীক নয়, এটা ঐক্যের প্রতীক। জনগণের ঐক্যের প্রতীক।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে তারা। কিন্তু দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্রের মুক্তি, রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরে পেতে ধানের শীষে ভোট দিন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, যারা ’৬৯ দেখেছেন, ৭১ দেখেছেন, তারা ২০১৮ সালের ঐক্য দেখে বিস্মিত হবেন। আচরণের কারণে বর্তমান সরকার নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ভূমিকা পালন করছে, মীরজাফরদের মতো নিন্দিতের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে তারা। জনগণ তাদের এই ভূমিকারও জবাব দেবে আগামী ৩০ তারিখে ভোটের মাধ্যমে।

সর্বশেষ খবর