শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয়

আগামীর বাংলাদেশে কাজে লাগাব তারুণ্যকে

♦ ফেসবুক ও আলীবাবার মতো সফল উদ্যোক্তা হবে আগামীর বাংলাদেশ
♦ ছোটবেলায় দুশ্চিন্তায় থাকতাম মা কখন ফিরে আসবেন
♦ কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না এটা মায়ের কাছে শিখেছি

রফিকুল ইসলাম রনি

আগামীর বাংলাদেশে কাজে লাগাব তারুণ্যকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তান এবং তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশে কাজে লাগাব মেধাবী তরুণ সমাজকে। আমরা মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি। এবার যুদ্ধ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, যা আমি বিশ্বাস করি, যার পক্ষে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তা অর্জনের জন্য আমাকে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে। আর কোনো কাজে সচেষ্ট থাকলে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। কোনো কিছুতেই সহজে হাল ছাড়া যাবে না- এসব আমি মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি। আমার স্বপ্ন আগামীতে বাংলাদেশে ফেসবুক ও আলীবাবার মতো সফল উদ্যোক্তা গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ। গতকাল ধানমন্ডির সুধা সদনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ সময় আলাপকালে তারুণ্যের প্রতীক প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় আগামীর বাংলাদেশ, তার শৈশবের সংগ্রাম, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।  প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন দেশে কোনো কিছুই ডিজিটালাইজ ছিল না। ইন্টারনেটের মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রতি এমবিপিএসের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। আর এটা শুধু পাওয়া যেত শহরে। বিশ্ব যখন ফোর-জি ছিল তখন বাংলাদেশ ছিল টু-জিতে। প্রায় দুই জেনারেশন পেছনে ছিলাম আমরা। আগামীতে মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব সরকারি-বেসরকারি সেবার নব্বই শতাংশ হাতের নাগালেই পাবেন এটাই আমাদের লক্ষ্য। এবার ক্ষমতায় এলে এ কাজটাই করব।

 

শৈশবের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করতে চাই। ছোটবেলায় আপনি কঠিন সময় পার করেছেন। একদিকে জাতির জনকের মৃত্যু, অন্যদিকে প্রবাসজীবন। সে দিনগুলোর কথা কি এখনো মনে পড়ে?

আমার নানা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স মাত্র চার বছর। কী ঘটেছে মা তা বলতেন না। তবে বসে বসে কাঁদতেন। কী ঘটেছে অনুমান করে একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম, তিনি জবাব দিলেন না। শৈশবের অনেক স্মৃতির এটা একটা।

দিল্লিতে আপনাদের এক কঠিন সময় অতিক্রম করার কথা আমরা জানি। আপনার মা শেখ হাসিনা, আপনার খালা শেখ রেহানাসহ আপনারা সে সময় এক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছেন। সেই কঠিন সময়গুলো কীভাবে অতিক্রম করেছিলেন? এই কঠিন সময়ের পরই আপনার শিক্ষাজীবন শুরু। সেসব দিনের কথা বলুন।

দিল্লিতে আমরা ছোট একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম। জীবন-যাপন ছিল খুবই সাদাসিধে। আমার বোন আর আমি হেঁটে স্কুলে যেতাম। আশপাশ এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। স্কুলের পর আমরা ক্রিকেট বা লুকোচুরি খেলতাম। বয়স একটু বাড়লে আমি বাইসাইকেল চাইলাম। আমাদের তেমন টাকা ছিল না। তাই আমার বাবা বললেন, আমি ক্লাসে যদি প্রথম হই, তিনি আমাকে নতুন একটি বাইসাইকেল কিনে দেবেন। সে বছর প্রথম হই এবং আমার জীবনের প্রথম বাইসাইকেল পাই। বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেলে চড়ে ঘোরাঘুরি করতাম। আমি দ্রুত ছুটতে পছন্দ করি। একদিন এভাবে ছুটতে গিয়ে রাস্তায় পাথরের আঘাত লেগে খারাপভাবে পড়ে যাই। এখনো কিন্তু কোনো কিছুতেই ধীরগতি হই না!

১৯৮১ সালে জাতির এক দুঃসময়ে আপনার মা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আপনি তখন ছাত্র ছিলেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আপনার মায়ের যে সংগ্রাম, সেই সময়ের কথা আপনার মনে পড়ে কি? সেই কঠিন সময়ে আপনার মায়ের সেই যাত্রা, সেই সাহস আজকের এই দিনে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সেই দিনগুলো ছিল অনেক ভয়াবহ। সামরিক স্বৈরশাসন চলছিল। রাতে থাকত কারফিউ, জারি করা হচ্ছিল ১৪৪ ধারা। তার মানে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কোথাও যাওয়া যাবে না। গেলে মিলিটারি তুলে নিয়ে যাবে। মা বিভিন্ন সমাবেশে যেতেন। সফরে সফরে থাকতেন। প্রায়ই স্বৈরাচারের সমর্থকরা আক্রমণ চালাত। তাই আমরা দুশ্চিন্তায় থাকতাম তিনি (মা) কখন ফিরে আসবেন। ঘন ঘন তাকে গ্রেফতার করা হতো। প্রথম কি দ্বিতীয়বার তাকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা জানতাম না তিনি কোথায়? জীবিত আছেন কিনা তাও জানতাম না। পরে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এতে আমরা তেমন মাইন্ড করিনি। কারণ এ অবস্থায় তিনি তো ব্যস্ত থাকবেন না। আমাদের দিকে সময় দিতে পারবেন। যারা বলে এখন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা নেই, তাদের আমি জিয়াউর রহমানের স্বৈরশাসনের দিনগুলো মনে করিয়ে দিতে চাই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অভাব ওই আমলেই ছিল।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০০১ সালের কঠিন সময়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের রাজনৈতিক কঠিন দিনগুলো এখনকার এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বিএনপির শাসনকালে অবস্থা কত খারাপ ছিল মানুষ ভুলে গেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের ওপর জুলুম দিয়ে ওটা শুরু হয়েছিল। আমার এখনো মনে পড়ে, আমি পত্রিকায় পড়েছিলাম যে, দশ মাস বয়সী এক হিন্দু শিশুকে তার মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে আগুনে ছুড়ে দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। এ ঘটনাই আমাকে রাজনীতিতে ঠেলে দেয়। তখনই বিএনপির এই দানবদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেব এই শপথ নিই আমি। এরপর অবস্থা আরও খারাপ হয়। ১৯৭৫ সালের পর প্রথমবারের মতো চলতি সংসদের একজন সদস্য আমাদের নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করে। এরপর চালায় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা। সংবাদটা প্রথম আমি সিএনএন-এ দেখি। যারা ওদিন হতাহত হয়েছিল, তাদের অনেকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে আমি ও আমার বোন আইভি রহমানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি। আমরা তাকে ডাকতাম ‘আইভি নানি’। তার ছোট মেয়ে ময়নার সঙ্গে আমরা খেলাধুলা করতাম। ওইদিনটি আমি কখনই ভুলব না। ওই হামলার পাঁচ বছর পর আমি বাংলাদেশে ফিরে এলাম। সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হলাম। বিএনপিকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমি দৃঢ়সংকল্প ছিলাম।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ল্যান্ডসলাইড (ভূমিধস) বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেই অবস্থায় কীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগ? ২০০৮ সালের বাংলাদেশ আর ২০১৮ সালের আজকের বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

২০০৮ সালে আমরা সরকার গঠন করার সময় দেশের অবস্থা ছিল ভয়ানক। অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল স্থবির। দিনের আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে গণ্য হতাম আমরা। গত দশকে আমার মা, আমাদের মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্য এবং জনগণ নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই আমাকে বলতেন যে, আমাদের সরকারের কালে অফিস সময় বলতে কিছু ছিল না। দিনের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা অফিসে থাকতেন। এই যে কর্মনিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগের ভিশন, এগুলো দিয়ে আমরা বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হই।

আজ আমরা বিশ্বের বুকে দ্রুতবর্ধমান অর্থনীতির দেশ। আমরা আর গরিব দেশ নই, আমরা মধ্য আয়ের দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে তিন গুণেরও বেশি। আমরা সরকারি বেতন বাড়িয়েছি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন চার গুণ বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা কেউ আর চিন্তাও করেন না। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখলাম, গ্রামাঞ্চলে ৩০ শতাংশ বাড়িতে একটি করে রেফ্রিজারেটর রয়েছে। ১০ বছর আগে এমনটা কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল? আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখন যে অবস্থানে, বিশ্বের বুকে এই সম্মানজনক অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আমরা এটা করতে পেরেছি, এজন্য আমি খুব গর্ববোধ করি। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা করতে পেরেছি। বাংলাদেশের মানুষ আর খাদ্যাভাবের চিন্তায় উদ্বেলিত নয়, আমাদের জনগণের আয়ু বেড়েছে। তাদের জীবনযাত্রা সুন্দর হয়েছে। এটাই ছিল জাতির জনকের স্বপ্ন।

আপনি প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের যে সাফল্য, এই অগ্রগতি কীভাবে এত দ্রুত সফলভাবে সম্পন্ন হলো? প্রযুক্তির বিকাশে আগামী দিনের পরিকল্পনা কী? কীভাবে তারুণ্যের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চান। আগামী দিনের তারুণ্যের জন্য কী করার পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের, সেই কথা বলুন।

আমরা যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন বাংলাদেশ প্রযুক্তির দিক থেকে খুব পশ্চাৎপদ দেশগুলোর অন্যতম।  বলতে গেলে কোনো কিছুই ডিজিটাইজ ছিল না। ইন্টারনেটের মূল্য ছিল বিশ্বের সবচেয় বেশি- প্রতি এমবিপিএস ১০ হাজার টাকা। আর সেটা শুধু পাওয়া যেত বড় বড় শহরে। যখন দুনিয়ায় ব্যবহার হচ্ছিল ফোর-জি, আমরা তখন চর্চা করছি টু-জির। দুই জেনারেশন পেছনে পড়ে ছিলাম আমরা।

এ সমস্যাগুলোর প্রতিকারে আমরা সৃজনশীল পরিকল্পনা হাতে নিই। প্রত্যেক ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা এবং ওইসব সেন্টারের সঙ্গে অপটিক কেবল্ সংযোগের ধারণা ছিল আমারই দেওয়া। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে কাজটা আমরা দ্রুতই সম্পন্ন করি। আমরা সেবা খাতগুলোকে দ্রুত ডিজিটাইজ করছি। সব নাগরিক, বিশেষত যুবকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেবার নব্বই শতাংশ হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন এটাই আমার লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে এ কাজটাই আমরা করব।

তারুণ্যের জন্য আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে? আপনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?

আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ একটি আধুনিক উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আমরা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ঢাকায় মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হবে, এতে যানজট কমে যাবে। সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে সফল যুদ্ধ শুরু করি, সেভাবেই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করব। এ দেশকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলব।

আমাদের দেশের অভ্যন্তরে তারুণ্যের একটি বড় অংশ অবস্থান করছে। আবার বিদেশেও পড়াশোনা করছে আরেক দল তরুণ। দুই তারুণ্যের সমন্বয় করে তাদের একসঙ্গে কোনো কাজে লাগানো সম্ভব কিনা?

অবশ্যই সম্ভব। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা তরুণদের এন্টারপ্রেনিয়ার হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছি। এ ব্যাপারে দক্ষতা অর্জনের জন্য আমরা নারী ও তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমরা বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ঋণের জন্য তহবিল চালু করেছি। সামনের দিকে যা দ্রুত করতে চাই তা হচ্ছে, ফেসবুক এবং আলীবাবার মতো সফল একটি ইন্টারনেট কোম্পানি বাংলাদেশে স্থাপন।

প্রবাসে অধ্যয়নরত তরুণদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

এটা আসলে সরাসরি করা সম্ভব নয়। তবে ওদের সংশ্লিষ্ট করার জন্য আমরা পরোক্ষভাবে চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গভর্নমেন্ট ওয়েব পোর্টাল স্থাপন করেছি, যেখান থেকে সব ধরনের তথ্য ও সার্ভিস লিঙ্ক পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগের মান প্রতিবেশী দেশগুলো এমনকি ভারতের চাইতেও ভালো। বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে সংযোগ রক্ষা করছে। আমাদের প্রবাসী মেধাবীরা এভাবে নিজেদের দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে পারেন।

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন। সেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কেমন হবে?

পরবর্তী মেয়াদে ক্ষমতায় এলে আমরা বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলারে উন্নীত করব। নিশ্চিহ্ন করব চরম দারিদ্র্য।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আপনার মা। আপনি তার ছেলে, আপনার মা আপনাদের সবসময় ঠিকমতো পড়াশোনা করতে বলেছেন। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে বলেছেন। মানুষের মতো মানুষ হতে বলেছেন। এ ব্যাপারে একটু বলবেন?

জি, ঠিকই শুনেছেন। মা সবসময়ই আমাদের বলতেন, লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াও। এখন আমরা সে পথেই আমাদের সন্তানদের বলছি। আমাদের পরিবার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। আমার বিশ্বাস, এ কারণেই আমরা সফল হয়ে উঠেছি। আমরা ভাইবোনেরা কেউই মাস্টার্স ডিগ্রির নিচে নই; দুজনই অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডের গ্র্যাজুয়েট। এক বোন তো যুক্তরাজ্য সংসদের সদস্য। আমরা সবাই বিদেশে মেহনত করে ক্যারিয়ার গড়েছি। আমি হয়েছি আইটি এন্টারপ্রেনিয়ার। প্রথম কাজ শুরু করি সিলিকন ভেলিতে। ২০০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আইটি উত্থান ব্যর্থ হয়, তখন আমার কোম্পানির লোকসানে সবই যায়। ওই অভিজ্ঞতা থেকে কয়েক বছর পরে আবার চেষ্টা করলাম। শেষতক সফল হলাম। সবকিছু কঠোর মেহনত ও সক্ষমতা দিয়ে অর্জন করেছি।

আপনাদের অনেক খারাপ সময় গেছে। ছোটবেলা থেকে শুরু করে ১/১১-এর সময়ও আপনি আপনার মাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। তখন তাকে কেমন করে এত ক্রাইসিস হ্যান্ডেল করতে দেখেছেন? 

সংকটকে আমার মা সবসময় সামনাসামনি মোকাবিলা করেছেন। তিনি কখনো ভয় পাননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, যতক্ষণ তিনি ন্যায্য কাজ করবেন, সাফল্য পাবেনই। ১/১১-কে অনেকে তার জন্য কঠিন সময় মনে করেন। কিন্তু সবচেয়ে সংকটময় সময় ছিল ১৯৭৫ সাল। ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগ ছিল শক্তিশালী। অনেক নেতা তখন মা এবং পার্টির পাশে দাঁড়ান। আমিও। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের খুব ঠাণ্ডা মাথায় জেলখানার ভিতরে হত্যা করা হয়। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার এমনকি ১০ বছর বয়সী আমার মামা রাসেলকে হত্যা করে। এ হত্যার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করা। স্বৈরাচারী জিয়াউর রহমান সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। আমাদের দলের অনেক সক্রিয় নেতা-কর্মীকে হত্যা করেন। আমার মনে পড়ে, মা যখন রাজবন্দী তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একেবারের নিচু স্তরের কর্মকর্তা ডেস্ক অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করি। তিনি আমাকে বোঝাতে চাইলেন যে, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সংঘাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। আমি তাকে বলেছি, মিথ্যাচার করবেন না। আমি তাকে বললাম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর গণতন্ত্র আর মানবাধিকারকে লিভসার্ভিস দিচ্ছে আর বিশ্বের নানা দেশে ডিক্টেটরদের পুষছে। আমি তাদের জানাই, আমার মাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তারা যদি চাপ সৃষ্টি না করে তাহলে আমি কলকাতা যাব এবং সেখান থেকে আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশে যাব। আমি তাদের জানাই, মা যতদিন বন্দী থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশে তাদের কাক্সিক্ষত কাজ তারা করতে পারবে না। অফিসার তো হতভম্ব হয়ে যান, কোনো জবাব দিতে পারেননি।

আপনার মায়ের সবচেয়ে মজার রান্নাটা কী আপনার কাছে?

তিনি চমৎকার মোরগ-পোলাও রান্না করেন। তিনি পশ্চিমা খাবারও রান্না করার চেষ্টা করতে ভালোবাসেন। তিনি লাজানিয়া (পাস্তা) রান্না করেন। তবে তাতে বেশ সবজি মিশিয়ে থাকেন। আমার মেয়ে সোফিয়া কিন্তু ওটা পছন্দ করে না।

আপনি আপনার মাকে কি গিফট দেন? তিনি কী পছন্দ করেন? সবার তো কিছু বিশেষ পছন্দ থাকে।

আমি তো প্রযুক্তির মানুষ। বুঝতেই পারছেন মাকে কী উপহার দিয়ে থাকি? কয়েক বছর ধরে তার জন্মদিনে আমি সর্বাধুনিক স্যামসাং ফোন উপহার দিয়েছি। আমার কাছে শপিং একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। তাই আজকাল পরিবারকে দেওয়ার জন্য সবরকম উপহার আমার স্ত্রী ক্রিস্টিনা কিনে থাকেন।

মার কাছ থেকে কী শিখেছেন যা আপনার মধ্যে সবসময় কাজ করে?

কিছুতে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এটা মায়ের কাছে শিখেছি। শিখেছি, যা আমি বিশ্বাস করি, যার পক্ষে আমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তা অর্জনের জন্য আমাকে সচেষ্ট থাকতে হবে। দৃঢ়চিত্ত থাকলে সব বাধাবিঘœ অতিক্রম করা যায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনেকেই নেতা হিসেবে জানি, আপনার মা হিসেবে কিছু বিষয় আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন? যেমন আমরা শুনেছি, তিনি খুব ধার্মিক একজন মানুষ।

হ্যাঁ, তিনি খুবই ধার্মিক। প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে ওঠেন। নিয়মিত কোরআন পড়েন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন। দেশের জন্য কাজ করা তার নেশার মতো। এমনকি বাসায় থাকলেও তিনি ফাইল স্বাক্ষর ও মোবাইলে বিভিন্ন দাফতরিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। গত দুই বছর ধরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে ছুটি কাটাতে মাকে আমার বাসায় নিয়ে যাই। আমার বাসায় তাকে কোনো অফিশিয়াল মিটিং করতে না দেওয়ায় তিনি আমার প্রতি কিছুটা বিরক্ত ও রাগান্বিত হন।

আমরা জানি ১/১১-র সময় আপনি হার্ভার্ডে পড়তে যান। তখন আপনার মা গ্রেফতার হন। আমরা শুনেছি, আপনাকে তার পরও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বলেন তিনি। বিষয়টি কি একটু শেয়ার করবেন?

হ্যাঁ, এটা সত্য। ২০০৭-এর প্রথম দিকে আমি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করি এবং এপ্রিলে তা গৃহীত হয়। মায়ের বন্দী হওয়ার আগে হার্ভার্ডের কাছে আমি একটি বাসা ভাড়া নিই এবং ভার্জিনিয়ায় আমার নিজের বাসাটি ভাড়া দিই। মায়ের গ্রেফতারের সংবাদের পরপরই আমি আমার সবকিছু গুছিয়ে দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু যে রাতে মিলিটারি মাকে গ্রেফতার করতে আসে তখনই তিনি আমাকে ফোনে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন এবং আমাকে হার্ভার্ডে পড়া চালিয়ে যেতে বলেন। ওই রাতের পর আমি তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি। কিন্তু বন্দী হওয়ার পরও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তিনি আমাকে হার্ভার্ডে পড়াশোনা চালু রাখার নির্দেশ দিতেন। তিনি জানতেন, আমি হার্ভার্ডে যাওয়া বাতিল করে দিতে পারি। পরবর্তী বছর পর্যন্ত তার সঙ্গে আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক সময় জন্মদিনে আপনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ওইদিনটাতে আপনারা কী করেন? তিনি কী খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন?

সাধারণত আমরা কেক কাটি এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাই। আমার যতদূর মনে পড়ে, গত বছর আমার মেয়ে সোফিয়া তার জন্য কেক বানিয়েছিল। এর অল্প কিছুদিন আগেই সোফিয়া কেক বানাতে শিখেছিল। মা বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে পছন্দ করেন। তিনি সাধারণত যে দেশে অবস্থান করেন, সে দেশের খাবার খান; কিন্ত প্রতিদিন নয়। দিনে অন্তত একবার তার ডাল-ভাত খেতেই হয়।

দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর