শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন

আমাদের শেষ যুদ্ধ ভোট কেন্দ্রে

শফিউল আলম দোলন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের শেষ যুদ্ধ হবে ভোট কেন্দ্রে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার দিন। তাই নিজের ভোট নিজে দেবেন। কেউ অন্যায়ভাবে বাধা দিলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবেন।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন এই সরকার কিছুতেই চাইবে না একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে, এতে তাদের কী অবস্থা হবে। এজন্য তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনের মাধ্যমে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকার ভয়ের এ পরিবেশ তৈরি করলেও এতে কোনো ভয় নেই ভোটারদের। আগামীকাল ভোটের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করব।’

ভোটারদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আপনারা সবাই নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। আমরা পরিবর্তন চাই। দেশের সর্বস্তরের মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবতর্ন চাই। দেশের মানুষ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ অবস্থায় জনগণকে দলবদ্ধভাবে ভোট দিয়ে ভোটের হিসাব বুঝে নিতে হবে।’ মাঠপর্যায় থেকে তিনি নিয়মিত অসংখ্য ফোনকল রিসিভ করছেন এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা জনগণের পক্ষ থেকে সর্বত্র বিপুল সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রকে খাটো করে দেখে উন্নয়নের কথা বলে তারা মূলত জনগণের অধিকার রক্ষার কথা ভাবে না। আমরাও উন্নয়ন চাই। অবশ্যই দেশ উন্নত হবে, কিন্তু সেই উন্নয়ন শুধু ওপরতলার লোকদের জন্য নয়, উন্নয়ন হতে হবে সবার জন্য। এ ক্ষেত্রে কোনোরকমের ভেদাভেদ চলবে না। বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন হতে হবে সব মানুষের জন্য।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশবাহিনী সম্পর্কে আমার চরম একটা তিক্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে এবার। এটা শুধু আমার একার নয়, পুরো দেশবাসীসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বও দেখতে পাচ্ছে। অথচ আমাদের পুলিশবাহিনীর কত সুন্দর একটা অতীত ঐতিহ্য রয়েছে।’

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান হয়নি অভিযোগ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকেই সরকার ও ইসি নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। তার পরও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। দেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যে কোনো গণবিরোধী নীলনকশা রুখে দেবে। আগামীকাল নির্বাচন অথচ এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান হয়নি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমেরিকাসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দিলেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের কৌশল নেওয়া হয়েছে।’ জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো নির্বাচনে ভোট প্রদানকে একটি উৎসব হিসেবে মনে করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জনগণ ভোট উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট উৎসবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে।’

সবাইকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘ধানের শীষে ভোট দিলে আপনারা মুক্ত হবেন। এই প্রতীক কোনো দলের প্রতীক নয়, এটা ঐক্যের প্রতীক। জনগণের ঐক্যের প্রতীক। ঐক্যবদ্ধ জনগণের পক্ষে ভোট দেবেন, ধানের শীষে ভোট দেবেন- এটা সোজা কথা।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর