রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিরাপত্তার চাদরে সারা দেশ

সাখাওয়াত কাওসার

সাইবার ও ভার্চুয়াল জগৎকে ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। শঙ্কামুক্ত ভোটের মাঠ নিশ্চিত করতে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহলসহ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ। গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকছে। ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ঢাকা মহানগরীতে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নেই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে গোটা নগরী। কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, পেশিশক্তি ব্যবহার করতে চায় এবং কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জানা গেছে, সাইবার ওয়ার্ল্ডের ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাইবার ইউনিট। যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মনিটরিংয়ের আওতায় চলে আসছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আল কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন এলাকা থেকে কোন প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য আপলোড করেছেন এবং এক্ষেত্রে কোন সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহার করা হয়েছে তা মুহূর্তেই আমরা জানতে পারছি। এক্ষেত্রে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ আমাদের ভালো সহযোগিতা করছে। কোনো অপরাধীই মনিটরিংয়ের বাইরে নন।

গত বৃহস্পতিবার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মিত সেনা টহলের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ১ হাজার ৫২৩টি টহল পরিচালনা করেছে। এ ছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েনের দিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় চার হাজার টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যে কোনো প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে সেনাবাহিনী। জানতে চাইলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্যা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। ভোটের দিন ও ভোট পরবর্তী সময়ে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই এমন সর্তকতা। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি অলিতে গলিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবকে টহল দিতে দেখা গেছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে র‌্যাব-১ আশপাশের পুরো এলাকায় টহল দিয়েছে। মতিঝিল, মগবাজার, রামপুরা এলাকাতেও দেখা গেছে এমন অবস্থা। পুরো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পুলিশও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতেই এমন ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গুলশানের কূটনৈতিক পাড়া থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। তবে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্মকর্তারা। সঙ্গে থাকছে বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার।

র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, র‌্যাব-৩-এর অধীন ৩২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই আছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মতিঝিলের মতো এলাকাও আছে। র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে তারা প্রস্তুত আছে। নির্বাচনের পরদিন থার্টিফাস্ট নাইট থাকায় এবারের নিরাপত্তা থাকছে অনেক কৌশলী। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, ঢাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। ঢাকা শহরে ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর