দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের প্রতি নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দেয়, তবু আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আমি সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, বিএনপি-জামায়াতের একটি চরিত্রই রয়েছে নির্বাচনের মাঝপথেই তারা ঘোষণা দিতে পারে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার এবং নির্বাচন বয়কট করার। সে ক্ষেত্রে আমি আমাদের প্রার্থী এবং অন্য দলের যারা রয়েছেন তাদের বলব, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চালিয়ে যান।’ গতকাল সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমানকে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনী সহিংসতার শিকার মাহবুবুর রহমান গুরুতর অবস্থায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি বলতে চাই, বিএনপি নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে হয়তো বলে বসবে, আমরা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এটা বিশ্বাস করবেন না। এটা তাদের আরেকটি খেলা।’ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সাড়ে চারশর ওপর নেতা-কর্মী আহত। এখন ওরা চোরাগোপ্তা হামলা করছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী নালিশও করে বেড়াচ্ছে, আবার উল্টোদিকে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর আঘাতও করছে।’
এর পরও প্রত্যেককে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি যে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে। সেটি আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি মানুষের ভিতরের যে আকাক্সক্ষা। কাজেই কোনোমতেই যেন এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের যারা দলের বা জোটের নেতা-কর্মী আছেন বা প্রার্থী আছেন, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ তৈরি হয়নি- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লেভেল করা মানে তাদের এমন একটা অবস্থা করে দেওয়া হোক, অতীতে তাদের যেটা অভ্যাস ছিল একেবারে জিতিয়ে দিতে হবে। ফলে এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতা করে যে জিততে হবে এটা তাদের মধ্যে নাই।’ বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের সমস্যা তারাই সৃষ্টি করেছে। একেকটা নির্বাচনী এলাকায় চারজন-পাঁচজন করে তারা মনোনয়ন দেয়। এরপর সেটা ট্রেড করে, অনেকটা বলতে গেলে অকশনে দেয়। কে কত বেশি টাকা দেবে সে প্রার্থী হতে পারবে। তারা এই নির্বাচন বাণিজ্যটা করে। এই বাণিজ্য করার ফলে তাদের অনেক ভালো ভালো ক্যানডিডেট এবং পুরনো যারা, মানে এলাকায় যাদের ভালো যোগ্যতা আছে তারা অনেকেই নমিনেশন পায়নি। যার ফলে তারা নিজেরাই ক্ষুব্ধ হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই চার-পাঁচজন যে দিয়েছিল, হয়তো একজন পেয়েছে, বাকি কয়জন খেপে আছে। সংঘাতটা তাদের নিজেদের ভিতরে। কারণ যারা পায়নি যে পেয়েছে তাকে এলাকায় যেতে দেবে না তারা। তারাই মারপিট করে, তারাই তাদের অফিসে আগুন দেয়। কিন্তু তারা সব সময় দোষটা আমাদের ওপর ফেলে। মানে উদোর পিি বুধোর ঘাড়ে দেওয়া- এটা তাদের একটা অভ্যাস। এই করে তারা পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, অনেক সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা উন্নয়নের জন্য ‘একান্তভাবে’ দরকার। বাংলাদেশে সব জায়গায় দেখলেই বোঝা যাবে গত ১০ বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ আরও উন্নত সম্মৃদ্ধ হবে। শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘কালকে (আজ) নির্বাচন। আমি চাই, একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, সেটাই আমাদের কাম্য। একটা কথা আমি জনগণকে বলব, নির্বাচনটা যদি শান্তিপূর্ণভাবে করে ফেলতে পারি এবং এই নির্বাচনের পর এইটুকু কথা দিতে পারি যে, বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব। উন্নত-সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব।’ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে জাতির জনকের কন্যা বলেন, ‘আমার কথা আমি এটুকু বলতে পারি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, আর না দিলে নাই। এটা সম্পূর্ণ জনগণের ওপর আমি ছেড়ে দিচ্ছি।’ শেখ হাসিনা দিনাজপুর আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তার চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন।