সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ ভোট উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ ভোট উৎসব হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে ২৯৯ আসনে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নজিরবিহীন।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় ছিল ভোটারের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী ও তরুণ ভোটারের দীর্ঘ সারি ছিল চোখে পড়ার মতো। আমাদের বিভাগীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ শহরে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। এ ছাড়া গ্রামগঞ্জের ভোটাররা সকাল থেকেই ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিয়েছেন। খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় শান্তির্পূণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। উৎসবমুখর পরিবেশে জীবনে প্রথমবার ভোট দিয়েছেন বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারাও।

দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ার রাসমেলা এলাকার বৃদ্ধ মোক্তার আলী বলেন, ‘বুইড়া বয়সোৎ এমপি ভোট দিয়া খুব আনন্দ পাইছি ভাইজান।’ টংকার মোড়ের রুজিনা বলেন, ‘ভোট দিমের পামো চিন্তাই করি নাই। যাই হামাক পরিচয় দিছে তার প্রার্থীক ভোটটা দিছি।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন সংঘাত, সহিংসতার কারণে সারা দেশে মোট ২২টি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যালটে ছিল ১ হাজার ৮৬১ প্রার্থীর নাম। তার মধ্যে দলীয় প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৭৩৩ জন, বাকি ১২৮ জন ছিলেন স্বতন্ত্র। আদালতের নির্দেশনার পর ধানের শীষের প্রার্থী ১৫ জন কমলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বেড়েছিল ২৯ জন। আওয়ামী লীগ ও শরিকদের মিলিয়ে নৌকার ২৭২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিলেন। তাদের বিপরীতে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি ও শরিকদের প্রার্থী সংখ্যা ছিল ২৮২। সবচেয়ে বেশি ২৯৮ জন প্রার্থী ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে। নির্বাচনে ছিল নিবন্ধিত ৩৯টি দল। ২৯৯ আসনে ভোটার ছিলেন ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৮২৩ জন। এর মধ্যে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ জন পুরুষ; ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০৩ জন নারী। কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ : ৪০ হাজার ৫১টি ভোট কেন্দ্রের ২ লাখ ৫ হাজার ৬৯১টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।

ভোট দিয়ে খুশি নতুন ভোটাররা : ভোলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ৪টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উৎসবমুখর। দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। বিশেষ করে ভোট এলেই সংখ্যালঘু ভোটাররা যেমন এক ধরনের আতঙ্কে থাকতেন এবার সে ধরনের কোনো আতঙ্ক বা ভয় তাদের মধ্যে ছিল না বলে জানিয়েছেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অবিনাশ নন্দী।

সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের প্রার্র্থী তোফায়েল আহমেদ শহরের বাংলা স্কুলে নিজের ভোট দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জনবিচ্ছিন্ন বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই দেশজুড়ে নৌকার গণজোয়ার উঠেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে এ গণজোয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নেরই ফসল।’

পিরোজপুর-২ (ভা ারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানি) আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সকালে ভা-ারিয়ার মজিদা বেগম মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। হেভিওয়েট এ প্রার্থীর নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ ও জেপি নেতা-কর্মীদের একত্রিত নির্বাচনী তৎপরতা ছিল বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি) আসনে নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম সকালে নিজ এলাকা নাজিরপুরের তারাবুনিয়া কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন এবং দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ভোটাররাও ভোট দিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান।

টাঙ্গাইলে ৮টি আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে জেলার ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়ে। মৌলভীবাজার-৪ আসনে (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টায় পৌর শহরের গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নম্বর বুথে পুরুষের লম্বা লাইনে ভোট গ্রহণ চলছিল। পরে সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ওই কেন্দ্রের একই বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজ ভোট প্রদান করেন। এ সময় কেন্দ্রের আশপাশে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল।

খাগড়াছড়ির ২৯৮ নম্বর আসনে ১৮৭টি কেন্দ্রে শান্তির্পূণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। খাগড়াছড়ির নৌকার প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ভোট প্রদান করেন দীঘিনালা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ সময় তিনি উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে দাবি করে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানান।

বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূইয়া ফরহাদ দুপুর ১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের কওে দেওয়া হয়েছে। মেহেরপুরের দুটি আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

সকালে জেলার ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে মেহেরপুরের দুটি আসনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের পরিবেশ নেই বলে দাবি জানিয়েছেন। বাগেরহাট জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে কোনো সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে জেলার ঐক্যফ্রন্টের চার প্রার্থীসহ জাতীয় পার্টিরও একজন প্রার্থী দুপুরে ভোট চলাকালে বর্জনের ঘোষণা দেন। পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ বিএনপি সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে দলটি। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র দখল করে ভোট বাক্স পূরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর