সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফলাফল প্রত্যাখ্যান ঐক্যফ্রন্টের

২২১ আসনে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকালের এই নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল আংশিক ঘোষণার পর রাত সোয়া ৮টায় বেইলি রোডে নিজ বাসায় তাৎক্ষণিক প্রেস বিফ্রিং ডেকে এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এমতাবস্থায় আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে এই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করা হোক এবং এই নির্বাচনের কথিত ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে প্রহসনের এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করছি। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকে বলেছে ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছিলাম। কিন্তু আজকের (গতকালের) নির্বাচন প্রমাণ করল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত সরকারের অধীনে কখনোই সুুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের প্রায় সব আসন থেকেই একই রকমের ভোট ডাকাতির খবর পেয়েছি আমরা। তিনি যত শিগগিরই সম্ভব নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বলেন, দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ঐক্যফ্রন্টের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন মেনে না নিলে আপনারা কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পুরো নির্বাচনটাকেই প্রত্যাখ্যান করছি। এটা কোনো নির্বাচন নয়। এটা গণতন্ত্রের নামে নিষ্ঠুর তামাশা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২২১ আসনে অনিয়মের অভিযোগ বিএনপির : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে অন্তত ২২১ আসনে নানা ধরনের অনিয়ম সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। এসব আসনে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা গিয়েছিলেন তাদেরও ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে শুধু আওয়ামী লীগের ভোটারদের বেছে বেছে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেড় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবৈধভাবে ৪০০ থেকে ৫০০টি ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালটবাক্স ভর্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। গতকাল ভোট চলাকালে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব  সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্ভরযাগ্য সূত্র থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে ২২১ আসনে অনিয়মের একই চিত্র। মাত্রার হেরফের থাকতে পারে। তবে সারা দেশের সার্বিক চিত্র এমনই। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত কী করব বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট প্রায় শেষ হয়েই গেছে। ভোটে না থাকার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। এবারের নির্বাচন সেটাই প্রমাণ করল। ২২১টি আসনের প্রতিটি কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ইসিকে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয় বলা হয়, দেড় শতাধিক আসনে প্রশাসনের সহায়তায় নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। ধানের শীষের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। এজেন্টরা  ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন না, নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা তাদের (বিএনপির এজেন্ট) কাছ থেকে ব্যালট পেপার জোর করে কেড়ে নিয়েছে। কোন কোন কেন্দ্রে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের কেউ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সহায়তা করেনি।

সর্বশেষ খবর