শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

যা হচ্ছে বিএনপিতে

ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকে বাদ দুই সিনিয়র নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যা হচ্ছে বিএনপিতে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মতভেদ প্রকাশ্য হচ্ছে। বেড়েছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। একে অপরকে ঘায়েল করেও বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রভাবশালী দুই সিনিয়র নেতার বক্তব্য নিয়েও বিএনপির ভিতরে-বাইরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপরই ওই দুই নেতা চরম ক্ষুব্ধ হন বলে জানা গেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে গতকাল ফের গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে স্টিয়ারিং কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে এক নেতা বলেছেন, ঘটনাটি সত্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানেন না। স্টিয়ারিক কমিটির আরেক সদস্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ কারণেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ কারণেই সম্প্রতি এই দুই নেতা দলের কাউন্সিল দাবি করেন। নতুনভাবে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার বিকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির এই দুই সদস্য সরাসরি দল পুনর্গঠনের পক্ষে মত দেন। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপিকে এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। ২০০৮ সালে এমনিভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরাজিত হয়েছিলাম। তার পর পর কিন্তু আমরা দলের কাউন্সিল করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সাহসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। আমরা যারা ব্যর্থ বলে পরিচিত হয়েছি তাদের পদ ছেড়ে দিতে হবে। তরুণদের জায়গা করে দিতে হবে।’ একই সুরে কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। তার ভাষ্য, ‘যারা এই দুঃসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের সামনের দিকে এনে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। দরকার হলে আমরা যারা আমাদের বয়স হয়ে গেছে আমরা সরে যাব তারপরেও এই দলটাকে তো রাখতে হবে। এই কাজ আমাদের কয়েক মাসের মধ্যেই করতে হবে। তাহলেই আমরা আবার মোড় ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ সূত্রমতে, এই দুই নেতার মতের সঙ্গে দ্বিমত খোদ তারেক রহমানসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য সব সদস্যসহ ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাও তারেক রহমানের মতের সঙ্গে একমত। তাদের বক্তব্য হলো, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে কোনো কাউন্সিল হতে পারে না। এখন সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে। সেটা আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনেও হতে পারে। তবে অঙ্গ সংগঠনের অস্পূর্ণ কমিটি বা তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি করা যেতে পারে। বেগম জিয়াবিহীন দল পুনর্গঠন করতে গেলে বিএনপিতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। এ দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারেক রহমানের কিছু ঘনিষ্ঠজন আনাগোনা করছেন। বিষয়টিকে সিনিয়র নেতারা বাঁকা চোখে দেখছেন বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর