শিরোনাম
বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক ২০ বছর ফাইলবন্দী

শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে বলছে পাউবো

মানিক মুনতাসির

প্রায় ২০ বছর ধরে ফাইলবন্দী হয়ে আছে ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি খুব শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে। আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইতিমধ্যে প্রকল্পের ফাইল নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। জাইকা’র করা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে এ প্রকল্প খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে সরকার।

জানা গেছে, প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দিলেও তা কাজে আসেনি। এরপর জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। ২০১৬ শুরুতে জাইকার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রকল্পটি সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো কাজ এগোয়নি। সেই সম্ভাব্যতা যাচাই আর প্রেজেন্টেশন ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো)। প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদনের পর এখন পর্যন্ত অর্থায়নকারী সংস্থা এবং রুট নির্দিষ্ট করতে না পারায় ২০ বছরেও কাজ শুরু করা যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থায়নকারী সংস্থার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ প্রকল্পটি নিয়ে মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে জাইকা তাদের বিশদ পরিকল্পনাও তুলে ধরে। আশা করা হচ্ছে, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত করা যাবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ঢাকার অভ্যন্তরে যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকার উত্তর দিকে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে ঢাকা-ডেমরা রোড, পূর্বে বালু নদী এবং পশ্চিমে প্রগতি সরণি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ইস্টার্ন বাইপাস রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর একনেক বৈঠকে প্রকল্পের ধারণাপত্র (পিসিপি) অনুমোদিত হয়। এ সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল (জিওবি) থেকে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা জোগানের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংক এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখালেও পরে সংস্থাটি এ থেকে সরে যায়। পরে জাইকা এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখায়। জাইকা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও করেছে। এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা, উপকারিতা, উপযোগিতার বিষয়ে সংস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রেজেন্টেশন দেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক আর অর্থায়নের শর্ত জটিলতায় সে আলোচনাও ভেস্তে যায়। ফলে অর্থায়নকারী সংস্থা চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনো ফাইলবন্দী হয়ে আসছে প্রকল্পটি। পাউবোর তথ্যমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে। এ বাইপাস ব্যবহার করে গাড়িগুলো ঢাকার ভিতরে না ঢুকেও রাজধানীর এক পাশ থেকে অপর পাশে চলাচল করতে পারবে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ধরা হয় ২৪ কিলোমিটার। কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক সমীক্ষার তথ্যমতে, সময়ের ব্যবধানে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ গুণ। ফলে যানজট নিরসন করতে হলে এ প্রকল্পটির আওতাও এখন অনেক বাড়বে। ফলে প্রকল্পটির ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করে বুয়েট ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাউবো। পাউবোর অপর সূত্র জানায়, অর্থায়নের জন্য ইতিমধ্যে জাইকার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার। বিদেশি কোনো অর্থায়নকারী না পেলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকার।

সর্বশেষ খবর