বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
টিআই’র রিপোর্ট

দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক বছরের ব্যবধানে আবারও দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের চার ধাপ অবনতি হয়েছে। ফলে বিশ্বে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১৩তম অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ, যা গত বছর ছিল ১৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত হলো বাংলাদেশ, এক নম্বরে আফগানিস্তান। এবার বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ডেনমার্কের নাম এসেছে বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআই প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৮-এ।  গতকাল ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘সিপিআই-২০১৮’র বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই অবস্থান তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ইফতেখারুজ্জামান। এতে ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ। টিআইবি প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচকের তথ্যনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ১৩তম অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দুই দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং উগান্ডা। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান ক্রমান্বয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং ভুটান। অর্থাৎ নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং ভুটানের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। ১৮০টি দেশের ওপর পরিচালিত টিআই জরিপে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৩ নম্বর অবস্থানে। উল্লেখ্য, ২০০৯, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালের সিপিআই-এও নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৩তম অবস্থানে ছিল। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে টিআইবি। সংস্থাটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। টিআইবি বলেছে, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক। টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৭ সালের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর ২ পয়েন্ট কমেছে, যেটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। এক বছরেই দুই পয়েন্ট স্কোর কমে যাওয়াটা উদ্বেগজনক। যদিও ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের মতো বাংলাদেশ সর্বনিম্ন অবস্থানে না থাকলেও আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের অবস্থান এখনো অত্যন্ত দুর্বল এবং বৈশি^ক গড়ের তুলনায় অত্যন্ত নিচে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে দুর্নীতির যে বিচারহীনতা, সারা দেশে ভূমি, নদী, জলাশয় দখলের যে প্রবণতা, রাষ্ট্রীয় ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, ক্রমবর্ধমান এবং বিব্রতকরভাবে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচার এবং রাষ্ট্রীয় নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক যে প্রভাব সেগুলোও আমাদের ভালো স্কোর না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার যে ঘোষণা দিয়েছেন এটি তার রাজনৈতিক সদিচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। তবে এই ঘোষণার কার্যকর ব্যবহার, প্রয়োগ এবং কারও প্রতি ভয় বা করুণা প্রদর্শন না করে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর