দীর্ঘ ২৮ পর অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। প্রতিদিনই ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের নিজেদের দাবি আদায় ও স্বপক্ষে জনমত তৈরিতে কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছে। ১১ মার্চ এ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন নিয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন তারা। ডাকসু নির্বাচনের সমন্বয় করতে পাঁচ নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রায় নয় বছর পর ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সকালে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের তিন মাস পর তফসিল ঘোষণা, ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে স্থাপনসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল। এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। স্মারকলিপি প্রদান শেষে সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ভিসির বাসভবনের সামনে দিয়ে টিএসসি হয়ে শাহবাগের দিকে চলে যায়। মিছিলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। পরে দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে শুনেছেন এবং আমাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর ডাকসু নির্বাচন হবে।’
ছাত্রদলের এই সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চাকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিদ চন্দ্র দাস বলেন, ‘এটা গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সবার রাজনৈতিক মতাদর্শ চর্চার সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে ছাত্রদল যদি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে, তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’ ছাত্রদল ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ঘিরে একটা পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তবে আমরা আসছি, চলে যাচ্ছি, এটা তো সহাবস্থান হতে পারে না।’ এদিকে গতকাল বিকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ডাকসু নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ নেতা। ওই পাঁচ নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান ও উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকসূত্র জানান, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগকে জোর প্রস্তুতির নির্দেশ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের মন জয় করে ডাকসুতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতে হবে। এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য যা যা করা এবং কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার সেগুলো করতে হবে। ভোটের জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কথা বলে ছাত্রদল নির্বাচন ভুল করতে চায়। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে।’