জোট ও ফ্রন্ট নিয়ে ঢিমেতালে এগোচ্ছে বিএনপি। ভোটের আগে-পরে দুই জোটের শরিকদের ভূমিকায় হতাশও দলটি। বিশেষ করে ভোটের মাঠে শরিকদের কার্যকর কোনো ভূমিকা ছিল না। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে শরিক দলগুলোর ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় দলটি। বিএনপির ভিতরে-বাইরে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভোটের পর জোট-ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না? তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, জোট-ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর প্রতিটি দলই নিজেদের মতো করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
সূত্রমতে, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দুই দিন পর ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে নির্বাচনে অনিয়মের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এরপর আর কোনো বৈঠক হয়নি। এই সরকারের অধীনে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আর না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানিয়েছে। জোটের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা বিএনপির একক সিদ্ধান্ত। জোটকে জানানোর প্রয়োজন বোধও করেনি। যদিও জোটের কোনো শরিক দলই এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না।
জানা যায়, ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। জামায়াত চলে গেলে জোট বিএনপির কাছে আরও গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তবে জোট ছাড়ার বিষয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ নিয়েও জোটের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ২০-দলীয় জোটের মুখপাত্র বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শিগগিরই জোটের বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে হয়তো এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘ভোটের পর একবার ২০-দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে। আশা করি শিগগিরই আবারও বৈঠক হবে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জোটগত কোনো আলোচনা না হলেও আমরা এতে অংশ নিচ্ছি না। জোটের কেউই নেবে না। ২০-দলীয় জোট আছে ও অটুট থাকবে।’
এদিকে ভোটের পর একাধিকবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০-দলীয় জোটেও নামকাওয়াস্তে বৈঠক হয়। কিন্তু কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ গতকালও ফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির প্রভাবশালী কোনো নেতাই উপস্থিত ছিলেন না। স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নিজেদের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। ভোটের পর স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যোগ দেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। পরে স্থায়ী কমিটির আরও দুজনকে নতুনভাবে স্টিয়ারিং কমিটিতে যুক্ত করা হলে একজন নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিলেও আরেকজন যাচ্ছেন না। একইভাবে কো-অর্ডিনেট কমিটিতেও বিএনপির প্রভাবশালী দুই ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মো. শাহজাহানকে যুক্ত করা হয়েছিল। তারাও এখন বৈঠকে যোগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সব মিলিয়ে বিএনপিও এখন আর জোট-ফ্রন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। কিন্তু আন্দোলনের ব্যাপারে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা। তারা শুধু মুখে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনের কথা বলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শক্ত আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয়নি। এটা জানার পরও শুধু ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধে বিএনপি রাজপথের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধ বা ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।’ কেউ কেউ বলছেন, সরকারের ক্ষমতা স্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করতেই ফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা তাদের এজেন্টের ভূমিকা পালন করছেন কি না সন্দেহ রয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে টানাপড়েনও চলছে। এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্কে কোনো ছেদ পড়েনি। টানাপড়েন সম্পর্কও নেই। কোনো সমস্যা থাকলে সেটি বিএনপিতেই থাকতে পারে। সবাইকে নিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো কারণও নেই।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের টানাপড়েন সম্পর্ক নেই। তবে ভোটের পর সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে। সবাই পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আছে এবং থাকবে। আগামীতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।’