সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐক্যফ্রন্টের আলোচনা সভায় যত কথা

দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে : ড. কামাল
খালেদা জিয়া অসুস্থ : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। জাদুঘরে গিয়ে আপনারা দেখেন, বঙ্গবন্ধু যে জাতির পিতা, তার নেতৃত্বে যে স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়েছিল এবং দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেসব দলিল সংরক্ষিত আছে। আর সেই মর্যাদা নিয়ে তিনি এখনো আছেন এবং থাকবেন। তাকে নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না।’ গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার বিষয়বস্তু ছিল ‘অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দিতে হবে ও জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করো’। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ড. কামাল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ঐক্য আছে। এটাকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। আর ঐক্যকে সুসংগঠিত করে, এখান থেকে যে দাবিগুলো উঠেছে, সেগুলো আমরা অর্জন করব।’ বক্তব্যের শুরুতে ড. কামাল হোসেন যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন দর্শকসারি থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক সম্বোধন করে বক্তব্য দিতে ড. কামালের প্রতি দাবি ওঠে। দর্শকসারি থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে ওঠেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম।’ এর মধ্যেই দর্শকসারির সামনে থেকে বলা হয়, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এ কথা আপনাকে (ড. কামাল) বলতেই হবে।’ এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই নেতাদের ধমকে থামিয়ে দেন। একপর্যায়ে ড. কামালের কাছে এসে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু তার কানে কিছু কথা বললে তিনি মন্টুকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘কেন কথা বলছ? আমি যা বলেছি, তা-ই বলব। এর বাইরে একটি কথাও বলব না।’ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে যে দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আমি এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত পোষণ করছি। এই দাবি পূরণে আমাদের ঐক্যকে আরও সুসংহত করতে হবে।’ তিনি বলেন, সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এটা সংবিধানে লেখা আছে, বঙ্গবন্ধু যেটা স্বাক্ষর করে গেছেন। সকল ক্ষমতার মালিক যদি জনগণ হয়, তাহলে অবশ্যই শাসনব্যবস্থা হবে গণতন্ত্র। ড. কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দ্বিমত হলে আমাদের ঐক্যে আঘাত আসে।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা দরকার’ বলে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খবর নিয়েছি, তার (বেগম জিয়া) জন্য যে মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা দরকার। সত্যিকার অর্থে তিনি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ। এমনকি তাকে তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং আমাদেরও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।’ আগুন জ্বলছে, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে আগুন জ্বলবে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এখানে (দেশে) শান্তি আসবে না। ধরপাকড় করে কখনো দেশ শাসন হয় না। অনুগ্রহ করে আপনি রাজনীতিবিদদের দিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করুন। গুপ্ত বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীদের পরিচালিত সরকার কখনো দেশের মঙ্গল আনে না। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আপনার মঙ্গল হোক।’ আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আপনারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করছেন। কিন্তু আবদার ও দাবি করে কোনো লাভ হবে না। সুতরাং আপনারা যদি সত্যি মুক্তি চান, তাহলে মাঠে নামতে হবে।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। তাই আমাদের ফ্রন্ট রাখতে হবে। আর এই ঐক্য নিয়ে রাজপথ কাঁপাতে হবে।’

সর্বশেষ খবর