শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

জীবন দিয়ে নুসরাত প্রতিবাদ করে গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন দিয়ে নুসরাত প্রতিবাদ করে গেল

কাজী রিয়াজুল

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, নুসরাতের বই থেকে যে চিরকুট উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে বোঝা যায় সে একটি প্রতিবাদী মানুষ। একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের কাছে, কারও যৌনবাসনার আছে সে কোনোরকম নতিস্বীকার করেনি। নুসরাত নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করে গেল। সে অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার না করে প্রতিবাদ করেছে, এটা সবার জন্য শিক্ষণীয়। নুসরাতের মৃত্যু দিনটাকে ‘নুসরাত ডে’ হিসেবে পালন করা উচিত।

গতকাল সকালে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে বহুল আলোচিত সোনাগাজী উপজেলার অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের লাশ দেখতে এসে গণমাধ্যমের কাছে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, নারীর প্রতি, শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, এটা সমাজের জন্য ব্যাড মেসেজ। মানুষ একটা শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছে। আমরা জানি না, কে কখন এই জাতীয় ঘটনার শিকার হয়ে যাব। এটার একটা পরিসমাপ্তি হওয়া উচিত। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সেই শাস্তি যদি মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে পারি, তাহলে আজকে মানুষের মনে যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে উল্লেখ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের দেশে অনেক আইন আছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও দিন দিন এসব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। মানুষ সঠিকভাবে তার বিচার পাচ্ছে না। যার ফলে অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের শাস্তির জন্য একটা আইন করার দাবি দীর্ঘদিনের, সেই দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

নুসরাত এবার ফেনী জেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পর ছাদে ডেকে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। দ্রুত ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বার্ন ইউনিটে টানা পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বুধবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। গতকাল ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নুসরাতের বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা মানিক। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।  নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, নিজ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।

ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের লোকজন। কিন্তু নুসরাত অস্বীকার করেন। এদিকে নুসরাতকে গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর