হ্যাম্পশায়ারকে নাকি বলা হয় আফগান-কাউন্টি! প্রধান শহর এক সাউদাম্পটনেই দুই হাজারেরও বেশি আফগান পরিবার থাকে। হোম ভেন্যুর স্বাদ দিয়েই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর এই ভেন্যুতে আফগানদের দুটি ম্যাচ দিয়েছে আইসিসি কিন্তু গতকাল সেই হোম ভেন্যুতেই আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। ৬২ রানের আগ্রাসী জয়ের নায়ক সেই সাকিব আল হাসান, যিনি এই আসরের শুরু থেকেই ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিচ্ছেন। প্রতি ম্যাচেই নিজেকে নতুন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত তিন ম্যাচে জিতেছে তিন ম্যাচেই সেরা সাকিব। গতকাল তো নিজের আসল চেহারায় দেখা দিয়েছেন। ব্যাট হাতে ৫১ রানের পাশাপাশি বল হাতে ২৯ রানে ৫ উইকেট। স্বপ্নের মতো বোলিং ফিগার ১০-১-২৯-৫! এই আসরে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং ফিগারের মালিক। ৬ ম্যাচে ৪৭৬ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, পাশাপাশি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের লড়াইয়েও ফিরলেন সাকিব। এখন উইকেট সংখ্যাও ৯টি। যুবরাজ সিংয়ের পর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করেন সাকিব। তিন দিন আগে এই উইকেটেই ভারতকে মহাবিপদে ফেলেছিল আফগান স্পিনাররা। রশিদ-মুজিব-নবী এই স্পিন ত্রয়ী মিলে মাত্র ২২৪ রানে আটকে ফেলেছিল। কাল সেই একই উইকেটে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ২৬২ রান। স্লো উইকেট। ধারাভাষ্যকারদের মতে, ২৩০-২৪০ রানের পিচ। সেখানে আফগানদের ২৬৩ রানের টার্গেট দিয়ে প্রথম ইনিংসেই যেন ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নেয়। তারপর সাকিবের ঘূর্ণি জাদুতে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে যায় আফগানিস্তান। মাত্র ২০০ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস।
আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ায় যেন বৃথাই গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি। গতকাল রান খরার উইকেটে মহামূল্যবান ৮৩ করে যেন ম্যাচসেরার পুরস্কারটা বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। কিন্তু সাকিব এমন বোলিং করলেন, শেষ পর্যন্ত আর প্রতিযোগিতার বৃত্তেই যেন ঢুকতে পারলেন না মুশি। সাকিব প্রথম স্পেলে ২ ওভার করে ২ রানে ১ উইকেট নেন। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে রীতিমতো ধসিয়ে দেন আফগানদের ইনিংস। ৫ ওভারে ৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সব মিলে ২৯ রানে ৫ উইকেট। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন। বিশ্বকাপের এই আসরে আগের ৫ ম্যাচে ব্যাটসম্যান সাকিবকে দেখেছে বিশ্ব, কাল দেখল বোলার সাকিবকেও। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আফগানরা যেন টাইগারদের সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিলেন! যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাতে একটা ‘ড্যাসিং’ ভাব চলে এসেছিল। গত বছর এশিয়া কাপেও তারা বাংলাদেশকে হারিয়েছিল। তাই নিজেদেরকে টাইগারদের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু কাল ব্যবধানটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন সাকিবরা। গতকাল বাংলাদেশ খেলেছে ‘টোটাল ক্রিকেট’! যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং, ফিল্ডিং তো অসাধারণ। টাইগাররা প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে হতাশ করেছিলেন আফগান বোলারদের। সেরা বোলার রশিদের ১০ ওভার থেকে নিয়েছেন ৫২ রান। সাকিব-মুশফিকরা ছাড় দেননি খোদ আফগান দলপতিকেও। তার ওভার থেকেও তো এসেছে ৫৬ রান। তবে সবচেয়ে বড় ঝড়টা গেছে দৌলত জদরানের ওপর দিয়ে। ওই পেসারের ৯ ওভার থেকেই এসেছে ৬৪ রান। তবে এ ম্যাচেও দারুণ বোলিং করেছেন আফগান স্পিনার মুজিবুর রহমান। ১০ ওভারে তিনি ৩৯ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে দিনের সব আলো তো নিজের দিকে করে নিয়েছেন সাকিব একাই।
ম্যাচ শেষে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমার সব সময় চেষ্টা থাকে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে। সেটা করতে পারলে খুবই ভালো লাগে।’টাইগারদের সামনে আরও দুটি ম্যাচ। প্রতিপক্ষ এশিয়ার দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২ জুলাই বার্মিংহামের এজবাস্টনে প্রতিপক্ষ ভারত। ৫ জুলাই লন্ডনের লর্ডসে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এশিয়ার দুই ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারালেই যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে এমন নয়! তবে শেষ দুই ম্যাচে ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চটা রাঙিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ!