মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার তথ্য গোপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান এবং তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। গতকাল কমিশনের সভায় অনুমোদনের পর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ। দুদক সূত্র জানায়, আসামিদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে কমিশন। গতকাল এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতারের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, গ্রেফতারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন গ্রেফতার করবেন কি করবেন না। কমিশনের জনসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দুদকের মামলার আসামি ডিআইজি মিজানের পরিবারের তিন সদস্য হলেন স্ত্রী  সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান। দুদকের নিজস্ব অফিসে এটি প্রথম মামলা। জানা গেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার ৪২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও তিন  কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার পাঁচ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। দুদক আইনের সংশোধিত বিধিমালা গত রবিবার প্রকাশিত হয়। এর ফলে এখন থেকে দুর্নীতির তফসিলভুক্ত অপরাধের মামলা করতে আর থানায় যেতে হবে না। নিজ দফতরেই দুদক মামলা করতে পারবে। সংশোধিত সেই বিধিমালা অনুযায়ী ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করল কমিশন। ডিআইজি মিজান বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুরের আলী আকবর মিয়ার ছেলে।

এ ছাড়া দুদকের পরিচালক (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাসিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিজানকে তলব করা হয়েছে। দুদক এক চিঠিতে ১ জুলাই সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনামুল বাসিরকে একই দিন বেলা ২টায় তলব করা হয়েছে। এই ঘুষ  লেনদেনের বিষয়ে সংবাদ প্রচার করা বেসরকারি  টেলিভিশন এটিএন নিউজের রিপোর্টার ইমরান  হোসেন সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৬ জুন তলব করেছে কমিশন। এদিকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় বরং অপরাধের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, কোনো মামলাই স্পেশাল মামলা নয়। প্রত্যেক অপরাধ সমান। এক নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে করে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে ডিআইজি মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। প্রথমে দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী অনুসন্ধান করলেও পরে এই দায়িত্ব পান বাসির। ডিআইজি মিজান ৯ জুন একটি বেসরকারি  টেলিভিশনে দাবি করেন, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাসির অভিযোগ থেকে রেহাই  দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন এবং বিভিন্ন সময় তার কাছে অনুসন্ধানের তথ্য সরবরাহ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দুদক পরিচালক বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১২ জুন মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে মঞ্জুর মোর্শেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি কমিটি রবিবার অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করলে মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন।

সর্বশেষ খবর