বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। গণতান্ত্রিক সব কাঠামো ভেঙে পড়েছে। পাবনায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার।মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার ট্রেনের ওপর হামলাসংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা বিচারব্যবস্থায় একই চিত্র তুলে ধরেছে। এই মামলার রায়ে নয়জনকে মৃত্যুদ , ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদে র শাস্তি প্রদানের আদেশ সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বলেন, আমরা যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমরা সব সময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অথচ একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব কর্মকর্তাকে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগপত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন-একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া তারা সম্পন্ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচারব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে জনগণের ন্যূনতম আস্থা নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিষ্কারভাবে এ কথা বলেছেন, বিচারব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে। জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ন আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে। ন্যায়বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি।
বিচারপতি সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।