বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
এপিজির মূল্যায়ন

অর্থ পাচার ঠেকাতে না পারলে ব্যাহত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

মানিক মুনতাসির

মানি লন্ডারিং কিংবা অর্থ পাচার ঠেকাতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি)। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। কেননা অনেক সময় বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যায়। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দিয়ে দুই দিনের সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছে এপিজি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আর ফিলিপাইনের মানি লন্ডারিং আইনের দুর্বলতার কারণেই নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করে এপিজি।

এ ছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত দুর্বলতাকেও দায়ী করেছে সংস্থাটি। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে যে কোনো দেশের বৈদেশিক ঋণমানে অবনমন ঘটে বলে মনে করে এপিজি। তবে বাংলাদেশ গত তিন বছরে তাদের এ-সংক্রান্ত কিছু আইন-কানুন বদলেছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের (টেকনিক্যাল কমপ্ল্যায়েন্স) দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পরিস্থিতিও ভালো অবস্থায় রয়েছে। ফলে বৈদেশিক ঋণমান আগের মতোই অক্ষুণœ থাকবে বলে আভাস দিয়েছে এপিজি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানান, ঢাকা সফরে এসে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠককালে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত তিন বছরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ ভালোভাবেই পরিপালন করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিশেষ আদালতও গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে এপিজি। ফলে সার্বিক বিবেচনায় এপিজির পরবর্তী বার্ষিক সভা বাংলাদেশে হতে প্রাথমিক কোনো আপত্তি নেই। সূত্র জানান, মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কর্তৃক অনুমোদিত একটি অ্যাকশন প্ল্যান এপিজির সামনে উপস্থাপন করা হলে সেটিকে তারা অত্যন্ত উপযোগী বলে মত দিয়েছে এবং এটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অনুকরণীয় মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করে এপিজি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, এপিজি সব সময়ই পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ সেগুলো পরিপালন করে। এবারের বেলায়ও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বাংলাদেশ যেহেতু এপিজির কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছে সেহেতু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের বিষয়ে বাংলাদেশের অতিরিক্ত কিছু দায়িত্বও রয়েছে। রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, এপিজি টিম বলেছে এ বিষয়ে তারা ফিলিপাইনকে চাপ দেবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সূত্র জানান, এপিজির সঙ্গে আলোচনায় সঠিক পথে রেমিট্যান্স আসছে কিনা- এ বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ ক্ষেত্রে শুধু মানি লন্ডারিং হয়ে চলে যাওয়া নয়, অন্য কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে অবৈধ চ্যানেলে অর্থ ঢুকছে কিনা বা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সঠিক চ্যানেলে আসছে কিনা সেসব বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও পরামর্শ দিয়েছে এপিজি।

সর্বশেষ খবর