শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচারকের খাসকামরায় আসামি খুন

মামলার এক আসামি ছুরি মেরে খুন করল আরেকজনকে, হতবাক বিচারক, স্তব্ধ আদালত

কুমিল্লা প্রতিনিধি

বিচারকের খাসকামরায় আসামি খুন

বিচারকের খাসকামরার টেবিলের ওপরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পাশেই পড়ে ছিল হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি। হত্যাকারী হাসান (বামে) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লার আদালতে বিচারকের খাসকামরায় একটি হত্যা মামলার আসামি ফারুক খুন হয়েছেন। ঘাতক একই মামলার আসামি হাসান শুনানি চলাকালে হঠাৎ ছোরা হাতে ফারুককে ধাওয়া করে। ফারুক তাড়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে বিচারকের খাসকামরায় ঢুকে পড়ে। হাসানও তার পিছু নিয়ে ঢুকে যায় খাসকামরায়। ফারুককে টেবিলের ওপর ফেলে হাসান এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। রক্তাক্ত ফারুক সেখান থেকে দৌড়ে বেরোনোর চেষ্টা করলেও মেঝের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ছোরা হাতে হাসান সেখানেও তার ওপর চড়াও হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জনাকীর্ণ আদালতে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ ও দর্শনার্থীদের সামনে ফিল্মি কায়দায় এই রোমহর্ষক খুনের ঘটনার সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছোটাছুটি করতে থাকে লোকজন। ঘটনার পর পুলিশ ঘাতক হাসানকে ছোরাসহ গ্রেফতার করে। নিহত ফারুক কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দিগ্রামের অহিদ উল্লাহর ছেলে। ঘাতক হাসান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ভোজপাড়া গ্রামের শহিদ উল্লাহর ছেলে। তবে হত্যা মামলার একজন আসামি ছোরা নিয়ে কীভাবে আদালতে হাজিরা দিতে প্রবেশ করল-এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে এ ঘটনায় জেলা পুলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআইও ওয়ান মাহাবুব মোর্শেদ। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার পর কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, আমার সামনে একজন আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হলো। আমার ওপরও হামলা হতে পারত। আমি ভীষণ শঙ্কিত। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, কুমিল্লার আদালতের বিচারকের খাসকামরায় একই মামলার এক আসামি অন্য আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। আসামিকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, এত নিরাপত্তার মাঝেও আসামি ছুরি নিয়ে কীভাবে আদালতের ভিতরে প্রবেশ করল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং দায়িত্বরত পুলিশের অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এপিপি নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের কাদিগ্রামে হাজী আবদুল করিম হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই মামলার ৪ ও ৮ নম্বর আসামি হলেন যথাক্রমে হাসান এবং ফারুক। সোমবার ওই মামলার জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার দিন ধার্য ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে  জেলার মনোহরগঞ্জ থানার ২০০৭ সালের একটি হত্যা মামলার শুনানি চলছিল। ঠিক ওই সময়ে হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার আসামিরা আদালতে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় মামলার আসামি হাসান হঠাৎ ছুরি নিয়ে তাড়া করে একই মামলার অপর আসামি ফারুককে। এ সময় জীবন বাঁচাতে ফারুক দৌড়ে বিচারকের খাসকামরায় প্রবেশ করে। হাসানও তার পিছু নিয়ে কামরায় ঢুকে ছুরিকাঘাত করে। সেখানেই খুনের ঘটনা ঘটে। আদালতে মামলার আইনজীবী নুরুল ইসলাম বলেন, ঘাতক আমাকেও ছুরি নিয়ে তাড়া করে। আদালতে অন্য একটি মামলায় সাক্ষী দিতে আসা এএসআই ফিরোজ ও আমার সহকর্মী অ্যাডভোকেট  সোমার সহযোগিতায় আমি প্রাণে বেঁচে যাই। আদালতে পুলিশ থাকার পরও আসামিরা কীভাবে আইনজীবী ও আসামির ওপর চড়াও হয়ে খুনের ঘটনা ঘটায়, তা আমার বোধগম্য নয়। আমি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভীষণ শঙ্কিত। কুমিল্লার আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্তত কুড়িজন আইনজীবী ও সহকারীরা।

আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ঘাতক হাসানকে আটকসহ তার কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে গুরুতর আহত ফারুককে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই ব্যক্তি ও ঘাতক উভয়ে হত্যা মামলার আসামি ছিল।

পুলিশের জেরার মুখে ঘাতক হাসান জানিয়েছে, ফারুক তাকে মামলায় জড়িয়েছে। সেই ক্ষোভে সে তাকে হত্যা করে।  

নাম না প্রকাশ করার শর্তে নবীন আইনজীবীদের অনেকে বলেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশে আদালতে এত দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কর্মতৎপরতা ভালো নয়। আমরা আদালতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোর দাবি জানাই।

সর্বশেষ খবর