শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ নিহত ১০ জন

সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক

ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ নিহত ১০ জন

অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে উঠে পড়া বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-রাজশাহী রেলপথের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষে বর-কনেসহ ১০ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও দুজন নারী রয়েছেন। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জ শহরের কান্দাপাড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে (বর) রাজন (২৫), এনায়েতপুর গুচ্ছ গ্রামের আবদুল গফুর শেখের মেয়ে (কনে) সুমাইয়া খাতুন (১৯), সয়াধানগড়া সুরুজ শেখের ছেলে সবুজ (২১), রামগাতী গ্রামের আবদুস সামাদ (৫৫) ও তার ছেলে শাকিল হোসেন (২১), সয়াগোবিন্দ মিলন মোড় এলাকার মাইক্রোবাস চালক স্বাধীন (৪০), দিয়ারধানগড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে  শরীফ (২৬)। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। আর এ দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- নাদেম তালুকদার (১৮), বায়েজিদ (১৮), নিরব তালুকদার (১৪), সুমন (২৭), নাজমুল আহসান (২৫) ও ইমরান (২০)। আহতদের সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রাখেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ জানান, বর যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস উল্লাপাড়ার গুচ্ছ গ্রাম থেকে কনে নিয়ে সিরাজগঞ্জের কান্দাপাড়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে অন্তত আধা কি.মি. ঠেলে নিয়ে থেমে যায়। এতে মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা বর-কনেসহ ১০ জন ঘটনাস্থলেই নিহত ও ৬ জন আহত হন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জনের লাশ জিআরপি থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। একজনের লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।  উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কওশিক আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেলপথটি অরক্ষিত। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় দাবি জানানোর পরও কোনো কাজ হয়নি। দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ দ্রুত রেলক্রসিং গেট নির্মাণের দাবিতে ট্রেনটি আটকে দেয়। এক মাসের মধ্যে রেলগেট নির্মাণের আশ্বাস দেওয়ার পর ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। নিহত বর রাজনের বোন জানান, চোখের সামনে ট্রেনটি ধাক্কা দিল মাইক্রোবাসটিকে। গাড়ির ভিতর থেকে সবাই বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার করছিল। চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল সবকিছু।

 জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, নিহতের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানায় আনা হচ্ছে। এলাকায় শোকের মাতম : কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের একমাত্র ছেলের বিয়ের জন্য বাড়িতে ছিল নানা আয়োজন। ৬টার দিকে ফোনে জানানো হয় নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে সবাই। কিন্তু শাহীকোলায় রেলগেটের কাছে পৌঁছামাত্র সংঘর্ষ হয়।

 ঘটনাস্থলেই ৯ জন মারা যান। দুর্ঘটনায় বিয়ে বাড়ির আনন্দ মুহূর্তে বিষাদে পরিণত হয়। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। শুধু আলতাফের পরিবারেই নয়, নিহতের সংবাদে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে গ্রামবাসী। সান্ত্বনা দিতে এসে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানহারা বাবা-মায়ের বুকফাটা আর্তনাতে কাঁপছে পুরো এলাকা।

সর্বশেষ খবর