রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছেলেধরা নিয়ে গুজব, পুলিশ সদর দফতরের সতর্কতা

অভিভাবকরা আতঙ্কে নিরীহ মানুষ হয়রানি পিটিয়ে মারার শঙ্কা

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীসহ সারা দেশে ‘ছেলেধরা’ গুজবে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই আতঙ্কে সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। কোমলমতি শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক অভিভাবক বন্ধ করে দিয়েছেন তাদের স্কুলে যাওয়া। অন্যদিকে ‘ছেলেধরা’ গুজবকে পুঁজি করে ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে অনেক নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে এ সংক্রান্ত বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, এ জাতীয় প্রতিটি ঘটনা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এটা ফৌজদারি অপরাধ। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুজব যাতে মানুষের মনে বাসা বাঁধতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের উচিত হবে এলাকায়-প্রচারণার ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় কাউন্সেলিং কর্মসূচি হাতে নেওয়া। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকেও বিশেষ পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অভিভাবকদের মাঝে আস্থা তৈরি হবে।  পুলিশ সদর দফতরের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মাথা লাগবে’ একটি গুজবকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। আর গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ফৌজদারি অপরাধ। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো নিহতের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিন।’ ‘ছেলেধরা’ গুজবে কাউকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্্) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টির ওপর নজর রাখছি এবং সংঘটিত ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানুষকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে, ছেলেধরা সন্দেহে গতকাল রাজধানীর উত্তর বাড্ডার কাঁচাবাজারে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ছাড়া গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ও কালিয়াকৈরের লতিফপুর এলাকা থেকে ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীসহ দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। পরে পুলিশ গুরুতর আহত মমতাজ নামের ওই নারীকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের আবদুল আলীমের স্ত্রী। অপরজন কালিয়াকৈর থানা হেফাজতে রয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, গণপিটুনির শিকার দুজনই মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ছাড়া সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুই স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন এক নারী। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। এর আগে গত ১৮ জুলাই নেত্রকোনার নিউটাউন এলাকায় সজিব মিয়া (৭) নামের এক শিশুর গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রবিন নামে এক যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন। এ নিয়ে থানায় দুটি মামলা হলেও পুলিশ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ এলাকায় মিজানুর রহমান মিজান নামে ৬ বছরের এক শিশুকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। গত ১০ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত এক যুবক (৩০) গণপিটুনিতে নিহত হয়। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি জনগণের মাঝে। অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি। এর বাইরে বিশেষ অপরাধ সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া যুবককে আমরাই তো প্রথম গ্রেফতার করি। তবে এ বিষয়টিতে যাতে অভিভাবকরা কোনোভাবে আতঙ্কিত না হন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর