সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছেলেধরা গুজবে হামলাকারীদের শনাক্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে

টেনেহিঁচড়ে বের করে হত্যা রেনুকে মেয়ের খোঁজে গিয়ে লাশ হলেন বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টেনেহিঁচড়ে বের করে হত্যা রেনুকে মেয়ের খোঁজে গিয়ে লাশ হলেন বাবা

রাজধানীর বাড্ডায় ছেলে ধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত তসলিমা বেগম রেনু (৪২) হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। একই সঙ্গে ছেলেধরার গুজব কারা ছড়াচ্ছে, আর বাড্ডার গণপিটুনিতে কারা জড়িত, তাদের ধরতে মাঠে নামার কথা জানিয়েছে পুলিশ। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেধরার যে অভিযোগ এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো যথার্থতা নেই। পুরো অভিযোগটাই মিথ্যা এবং অপপ্রচার। এই ঘটনায় তসলিমার পরিবার অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই সোহরাব  হোসেন বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে। এরপরই আমরা গ্রেফতার অভিযানে নামব। তদন্তে শুধু এই ঘটনার আসামিদেরই নয়, যারা ছেলেধরার গুজব ছড়িয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে, বলেন এসআই সোহরাব। পুলিশ সদর দফতর শনিবারই এক বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ার করে বলেছে, ‘গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ  তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল এবং গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারি অপরাধ। মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে সন্তান নিয়ে থাকতেন তসলিমা। সন্তানকে ভর্তির বিষয়ে খবর নিতে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। বছরের মাঝে ভর্তিও খোঁজ খবর নিতে যাওয়ায় কয়েকজন অভিভাবকের সন্দেহ হয়। এই সন্দেহ  থেকে তাকে নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার কাছে যান কয়েকজন অভিভাবক। সেখানে তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় বাইরে খবর ছড়িয়ে পড়ে ‘ছেলেধরা’ এক মহিলা ধরা পড়েছে। খবরটি মুহূর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং বাজারসহ আশপাশ থেকে শত শত লোক ছুটে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে এবং মহিলাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে গণপিটুনি দেয়। এসআই রাজ্জাক বলেন, স্বামীর সঙ্গে দুই বছর আগে তালাক হওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তসলিমা। এ জন্য এক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাও চলছিল তার। এদিকে গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে রেনুর মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মীপুরে নেওয়া হয়েছে।

মেয়ের খোঁজে গিয়ে লাশ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির আল-আমিন নগরে ছেলেধরা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহত সিরাজ  ছেলেধরা নন। বাকপ্রতিবন্ধী (বধির) সিরাজ নিজের মেয়ের খোঁজ নিতে গিয়েই গণপিটুনির শিকার হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। একই দিন পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় মানসিক প্রতিবন্ধী শারমিন বেগম ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে আহত হন। সিদ্ধিরগঞ্জের পৃথক এ দুটি ঘটনায় এজাহারনামীয় ৯৬ জনসহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

রবিন মাদকসেবী : নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় শিশুর মাথা বহনকারী গণপিটুনিতে নিহত যুবক মাদকসেবী ছিল বলে এলাকাবাসীসহ স্বজনরা জানায়। নিহত রবিনের মা মাজেদা খাতুন জানান, তাদের বড় ছেলে রবিন (৩০) বাবার মতো রিকশা চালানোসহ রাজমিস্ত্রি ও অন্যান্য কাজ করত। কিন্তু তার মাদক সেবনের ফলে থানায় নেওয়া হয়েছে কয়েকবার। মাদক নিরাময় কেন্দ্রেও দেওয়া হয়েছে অনেকবার। এসব কারণে স্থানীয় হওয়ার পরও নিজেদের জায়গা বিক্রি করে এখন ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। তাকে বিয়ে করানোর পর স্ত্রীকেও মারধর করত। যে কারণে তার স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গেছে বাচ্চাসহ। তিনি বলেন, ঘটনার ১০/১২ দিন আগে থেকেই রবিন লাপাত্তা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার খবর পাই যে একটি শিশু বাচ্চার মাথা কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারোর ওপর কোনো অভিযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর